লবণ আবহাওয়া অধ্যুষিত মোংলাসহ আশপাশের এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি নিয়ে হাহাকার বিরাজ করছে। শহরের পৌরসভায় পানিশোধন ও সরবরাহ কেন্দ্রের পুকুরের পানি তলানিতে ঠেকেছে। গ্রামাঞ্চলের পুকুরগুলোও প্রায় শুকিয়ে গেছে। বৃষ্টির দেখা নেই। এ অবস্থায় সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে এ এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। পৌরবাসীর অভিযোগ, পানি শোধনাগার কেন্দ্রে মাছ চাষ, পুকুরের চড়ায় গরু চরানো, সঠিক নিয়মে পুকুর খনন ও সময়মতো নদী থেকে পানি উত্তোলন না করা, অযোগ্য লোক দিয়ে শোধনাগার পরিচালনাসহ নানা অনিয়মের কারণে শহর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লবণপানি অধ্যুষিত মোংলা পৌরবাসীর সুপেয় পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৫ সালে পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি উত্তোলন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেয়। এ ল্েয পৌরসভার মাছমারা এলাকায় ৮৪ একর জায়গায় পাঁচ লাখ লিটার ধারণমতার একটি উচ্চ জলাধার, ৪৬ কোটি লিটার ধারণমতার একটি পানি শোধন ও সরবরাহ কেন্দ্রের কাজ শুরু করা হয়। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তা পৌর কর্তৃপরে কাছে হস্তান্তর করে। ছয় বছর ধরে পৌর কর্তৃপ পৌর এলাকার ২ হাজার ৫’শ পরিবারকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সকালে ও বিকেলে সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছে। গত মাস থেকে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এ সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল করা হয়েছে। পৌর পানি শোধনাগার কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রের বিশাল পুকুরটির তলানিতে সামান্য পানি রয়েছে।
পানি শোধনাগারের পাম্পচালক শাহিন বলেন, পুরাতন পুকুরের কিছু অংশের খননকাজ করায় পানি শুকিয়ে গেছে। তা ছাড়া নদীর পানি এখন অনেক লবণাক্ত। সেই পানি পুকুরে ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
এদিকে পৌর এলাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের একটি পুকুরে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পানি নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে নারী-পুরুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে এক কলস করে পানি সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই পানিও শেষের দিকে। এ ছাড়া পৌর এলাকার হাতেগোনা গুটি কয়েক পুকুরের পানিও শুকিয়ে গেছে। এসব পুকুর থেকে পৌরবাসী নিজস্ব উদ্যোগে কিছুটা হলেও সুপেয় পানি সংগ্রহ করতেন। অপরদিকে পৌর এলাকার ব্যক্তি মালিকানাধীন অধিকাংশ পুকুর গত কয়েক বছরে বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
শেহালাবুনিয়া এলাকার গৃহবধূ প্রতিমা রানী, মানসী বিশ্বাস ও ফাতেমা বেগম বলেন, পৌরসভার প থেকে কিছু এলাকায় ওপেনট্যাপ দেয়া হয়েছে। তা থেকে পানি আনতে লাইনে দাঁড়াতে হয়, কিন্তু আমাদের পে তা সম্ভব না। তাই এই পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সোহান আহম্মেদ বলেন, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নদীর মিষ্টি পানি সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুকুরে তোলা হয়। কিন্তু এবার পানি তোলার মৌসুমে পুকুরে পর্যাপ্ত পানি ওঠানো হয়নি। তাই এ সংকট দেখা দিয়েছে। পৌর কর্তৃপরে এই শোধনাগার প্রকল্প যারা দেখভাল করছেন, তারা এ বিষয়ে কতটুকু যোগ্য, তা পৌর কর্তৃপই বলতে পারবে। তা ছাড়া পুকুরে চাষকৃত মাছ ধরার পরও কিছু পানি কমে যায়। বিষয়টি পৌর মেয়রকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মো. জুলফিকার আলী বলেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নতুন একটি পুকুর পৌর কর্তৃপরে কাছে খনন না করেই হস্তান্তর করার চেষ্টা করছে এবং পুরোনো পুকুরটি পুরো খনন না করে তড়িঘড়ি করে চালু করার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একটু বৃষ্টি হলেই সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।