ঢাকাThursday , 20 June 2019
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গোপালগঞ্জে কথিত মৎস্য প্রকল্পের ঘেরে আটকে গেছে ৫৩ টি সংখ্যালঘু পরিবারের জীবন-জীবিকা

Link Copied!

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মাহমুদপুর বিল এলাকার ৫৩ টি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার। দিন দিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে তাদের কৃষি-জমি। দু’এক বেলা অর্ধাহারে-অনাহারে কাটে অনেকের। স্থানীয় প্রভাবশালীর নির্যাতণ-নিপীড়ণে এখন তারা দিশেহারা। প্রশাসনের দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে তারা বড় ক্লান্ত। কথিত মৎস্য প্রকল্পের ঘেরে কৃষি-জমিগুলি আটকা পড়ে থেমে গেছে তাদের জীবন-জীবিকা। তাদের নিরাপত্তাসহ কৃষিজমিগুলি সুরক্ষা না করা গেলে দেশান্তর হওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ক্ষতিগ্রস্থ সংখ্যালঘু জমির মালিকদের অভিযোগে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী পারুলিয়া গ্রামের প্রভাবশালী দিদার হোসেন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ১১২ নং মাহমুদপুর মৌজায় ওই বিলের ভিতরে বিভিন্ন স্থানে তিনি প্রায় ৬২ বিঘা কৃষিজমি ক্রয় করেন। এরপর ২০১৫ সালের শেষদিকে বিল-সংলগ্ন বাপাউবো’র নিকট থেকে ২.৩৭ একর জমি ইজারা নিয়ে মাছের ঘের করার জন্য বিলজুড়ে ‘মাতবর এ্যাগ্রো ফিসারিজ’ নামে মৎস্য প্রকল্পের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন। এরপর শুরু করেন বিলের চারিপাশে অবৈধভাবে বেড়ি-বাঁধ নির্মাণ কাজ। সেই থেকেই প্রভাবশালীর কবল থেকে নিজেদের এসব কৃষি জমি রক্ষার জন্য স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে বাপাউবো ওই ইজারা বাতিল করে দেয়। এ নিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বর ও ইউএনও-ওসিসহ গণ্যমান্যদের সমন্বয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সালিশ-দরবার হয়েছে বহুবার। সেখানকার সংখ্যালঘু নারী-পুরুষ এক হয়ে গোপালগঞ্জ শহরে এসে তারা মানব-বন্ধন বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন। সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বার বার। কিন্তু ফল হয়নি কোনও। বরং প্রভাবশালী দিদার হোসেন প্রশাসনের সকল নির্দেশ অমান্য করে কোন অনুমতি ছাড়াই প্রতিবছর একটু একটু করে এসব সংখ্যালঘু পরিবারের মালিকানাধীন কৃষিজমি কেটে তিনি তার প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণ কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। সরকারি কোন লম্বা ছুটি এলেই তিনি তার লোকজনসহ সেখানে স্কেভেটর নামিয়ে দেন এবং প্রশাসনের বাঁধা না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যান। এভাবে অবৈধ বেড়ি-বাঁধ নির্মাণ করে ঘিরে ফেলেন ওই বিলের প্রায় দেড়’শ বিঘা জমি; যার মধ্যে ৫৫ বিঘা কৃষি জমির মালিক সংখ্যালঘুরা।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, ৫৩টি সংখ্যালঘু পরিবারসহ ৫৮টি পরিবারের ৬৪ বিঘা কৃষিজমি এখনও ঘেরের মধ্যে রয়েছে; যা পরিবারগুলির বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। এছাড়া দিদার হোসেনের ৬২ বিঘা বাদে বাকী সব সরকারি জমি। এবারও ঈদের লম্বা ছুটি শুরু হলে দিদার হোসেনের শ’খানেক লোক রাতের আঁধারে স্কেভেটর নিয়ে সেখানে নামে। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকে ইচ্ছেমতো গালিগালাজ ও দেশত্যাগসহ মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শণ করে। একপর্যায়ে পিংকি বিশ্বাস (৩০) নামে এক গৃহবধূ’র গায়ের উপর স্কেভেটরের মাটি ফেললে তার অর্ধেকাংশ মাটিতে দেবে যায়। তখন কোনরকমে তাকে উদ্ধার করে ভীত সন্ত্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো নিজেদের অসহায় অবস্থা কথা বরাবরের মতোই জেলা প্রশাসককে জানান। পরে কাশিয়ানীর ইউএনও এ এস এম মাঈনউদ্দীন ও ওসি আজিজুর রহমানসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু ততক্ষণে বিলের দক্ষিণপাশের আরও প্রায় ৩’শ গজ বাঁধের কাজ এগিয়ে নেন। এভাবেই দিদার হোসেন যেন অপ্রতিরোধ্য ছিলেন এবং গত কয়েক বছরে বিলের চারিদিকে বাঁধ নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করেছেন। যেটুকু বাকী আছে, আরেকবার সুযোগ পেলে সেটুকুও হয়তো শেষ হবে। তাই দিদার হোসেনের আগ্রাসনের হাত থেকে রেহাই পেতে তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে আকুতির সুরে বলেছেন, ‘সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে না খেয়ে আমাদের মরে যেতে হবে নতুবা দেশ ত্যাগ করতে হবে’।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিলের তিন পার্শ্বে রয়েছে সরকারি খাল। উত্তরপাশে রয়েছে কুমার নদীর শাখা বলুগা-তেঁতুলিয়া খাল। সরকারিভাবে এটি খনন কাজের সময় ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে তিনি বিলের উত্তরপাশ বেঁধে নিয়েছেন। পশ্চিম পাশে রয়েছে এলজিইডি’র রাস্তা ও খাল। ওই খালটিও দখলে নেয়ার জন্য তিনি খালের মুখে বাঁধ দিয়েছেন। পূর্বপাশে খালপাড়ও অনেকটা বেঁধে ফেলেছেন আগেই। আর দক্ষিণপাশেও বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষের পথে। দিদার হোসেন তার সকল জমি পতিত রেখে ৩টি ব্লকের পানিসেচ মেশিন বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক আগে। অন্য জমির মালিকরা পার্শ্ববর্তী সরকারী খাল থেকে পানিসেচের ব্যবস্থা করতে গেলেও মারধর, গালাগাল ও লাঞ্ছনাসহ তাদেরকে নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়। এভাবে অনাবাদের ফলে অন্য জমিগুলোও পতিত হয়ে গেছে এবং গোটা বিলটি এখন পরিণত হয়েছে গো-চারণ ভূমিতে।
এ ব্যাপারে দিদার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কাল পরশু বলে শেষপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে আড়াল করেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, একজন ব্যক্তি অবৈধভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কৃষি-জমির ক্ষতি হয় এমনকিছু কার্যকলাপ করছে। খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক কাশিয়ানীর ইউএনও এবং ওসি’কে নির্দেশ দিলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্কেভেটর তুলে দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন। ইতোমধ্যে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে। তারা কথা দিয়েছেন; খুব শীঘ্রই এটির শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।