মো: আফসার খাঁন বিপুল,কালিয়াকৈর (গাজীপুর)প্রতিনিধি [ই-মেইলে ছবি আছে]
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা উড়াল সড়কের উদ্বোধনের ফলে একদিকে যান চলাচল যেমন নিরবিচ্ছিন্ন হয়েছে তেমনি আমূল পাল্টে গিয়েছে দৈনন্দিন যানজটের চিত্র। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ঈদযাত্রার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এই অংশকে যানজট মুক্ত করার জন্য দেশবাশীকে ঈদের উপহার হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত শনিবার এসব উড়াল সড়ক ও সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ফলে এবার ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরবে ঘরমুখো মানুষ।
সরেজমিনে কোনবাড়ী ও চন্দ্রা উড়াল সড়কে গিয়ে দেখা যায়, যানচলাচলের ভিন্ন চিত্র। প্রতিদিন যেখানে কোনাবড়ী বাস-স্ট্যান্ড অতিক্রম করতে প্রতিটি যানবাহনের দুই থেকে আড়াইঘন্টা সময় লাগত সেখানে বর্তমানে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে এই স্থানটি অতিক্রম করছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন দেশের উত্তরবঙ্গের ১১৮টি রুটের হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদে যানবাহনের চাপ আরো বৃদ্ধি পায়। এক সময় এটি ছিল যানজটের মহাসড়ক। যানজটে আটকে পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহনে বসে থাকতে হতো। ভাঙ্গাচুরা সড়কে এলোমেলো গাড়ি চলাচল ও ধুলোয় ধুসর হয়ে উঠতো মহাড়সকটি। এসব কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তেন অনেক যাত্রী। আবার সময় মতো পৌছতে না পেরে অনেকেই নানা সমস্যার সম্মুখিন হতেন। বিশেষ করে দুটি ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উড়াল সড়ক দুটি উদ্বোধনের পরপরই যানচলাচলের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। উড়াল সড়কের উপর উঠলে মনে হয় উন্নত বিশ্বের কোন যানজট মুক্ত মহাসড়ক।
উড়াল সড়ক দিয়ে চলাচলরত প্রভাতি বনশ্রী পরিবহনের চালক লোকমান হোসেন বলেন, ফ্লাইওভার উদ্বোধনের আগে প্রতিদিন কোনবাড়ীর যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হতো। কিন্তু গতকাল থেকে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই কোনাবাড়ী অতিক্রম করছি। ফলে ঢাকা থকে কালিয়াকৈর রুটে আমাদের ট্রিপের সংখ্যা বাড়ছে। আজমেরী পরিবহণের যাত্রী ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, আগে কোনবাড়ী হয়ে ঢাকা যাওয়ার কথা মনে হলেই শরীরে ঘাম ছুটত। কারণ কোনবাড়ীর যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাওয়ার কারণে ১ মিনিটও বসে থাকতে হচ্ছে না। তবে ফ্লাইওভারের পূর্ব পাশে কিছু কিছু জায়গায় কার্পেটিং না হওয়ার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির শংকা রয়েছে। চন্দ্রা উড়াল সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পলাশ পরিবহণের চালক শিপন বলেন, ফ্লাইওভার চালো হওয়ার আগে চন্দ্রা মোড়ে যানজটে প্রতিদিন এক থেকে দেড়ঘন্টা বসে থাকতে হতো। কিন্তু বর্তমানে চিত্র সর্ম্পূণ পাল্টে গেছে। এখন ২/৩ মিনিটে চন্দ্রা মোড় অতিক্রম করা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মনির হোসেন মোল্লা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন হওয়া কোনবাড়ী ও চন্দ্রা ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে কালিয়াকৈর যাওয়ার পথে রাস্তা কোথাও এক সেকেন্ডের জন্য গাড়ি চালাতে একটুও ক্লান্তি লাগেনি দেশের উন্নয়নে গাজীপুর বাসীকে এই সপ্নের ফ্লাইওভার উপহার দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
সাসেক প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এডিবি’র অর্থায়নে সাউথ এশিয়া রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন প্রজেক্টের আওতায় গত ২০১৬ সালে জানুয়ারী এ মহাসড়কটির চারলেনের কাজ শুরু হয়। ৫৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে ৯টি উড়াল সড়ক, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস ব্রিজ, ২৬টি সেতু নির্মাণ, ৭৪টি কালভার্ট সম্প্রসারণ, ৭টি আন্ডারপাস ও ১৩টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকার এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার দেওড়া এলাকার দুটি রেলওভার ব্রিজ। এবার ঈদে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার জন্য গাজীপুরের কোনাবাড়ি ১৬৫০ মিটার দীর্ঘ ও কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়ে নির্মিত ২৮৮ মিটার দীর্ঘ, ১৮ দশমিক ২০ মিটার প্রস্থ দুটি উড়াল সড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, এটি খুলে দেওয়ার ফলে এবার ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। তবে এ মহাসড়কে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে একাধিক স্থানে পুলিশের চাঁদাবাজি, যত্রতত্র গাড়ি পাকিং, চালকদের এলোমেলো গাড়ি চালানো, নিষিদ্ধ হওয়ার পরও পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে অটোরিকশা, সিএনজি মহাসড়কে চলাচল করা, অতিরিক্ত ভাড়াসহ বিভিন্ন কারণে নির্বিঘেœ ঈদযাত্রা নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও যাত্রীরা। তাদের দাবি, এসব সমস্যা রোধ করে মহাসড়কটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করার।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রজেক্টের এক নম্বর প্যাকেজের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানান, সাসেক-১ এর কাজ প্রায় শেষ, বর্তমানে সাসেক-২ এর কাজ চলছে। এবারের ঈদযাত্রা নিরাপদে ও নির্বিঘেœ করার জন্য দুটি ফ্লাইওভার, দুটি সেতু ও চারটি ওভারপাস খুলে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায় আর কষ্ট হবে না।