ঢাকাSunday , 17 February 2019
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাধারণ মানুষের জন্য গ্রাম আদালত কতটা প্রয়োজন: একটি নিরীক্ষা

Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি: সম্প্রতি চাঁদপুর জেলার স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মহোদয়ের সাথে আমি কচুয়া উপজেলাধীন আশ্রাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত পরিদর্শন করি। সেখানে গ্রাম আদালতের নথি ও রেজিস্টার পর্যবেক্ষণের এক পর্যায়ে আমি আদালতে সংরক্ষিত বিভিন্ন মামলার নথির মধ্যে এমন একটি নথি পাই যার প্রতি আমার আগ্রহ অনেকটা বেড়ে যায়। নথিতে দেখা যায় যে, মামলাটি প্রথমে স্থানীয় পুলিশ থানায় দায়ের হয়। এর কিছুদিন পর থানা থেকে মামলাটি জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেফার হয়। শুনানীর এক পর্যায়ে মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট হতে আশ্রাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে রেফার করা হয় যেহেতু মামলার পক্ষদ্বয় অত্র ইউনিয়নের বাসিন্দা। গ্রাম আদালতে নথিভূক্ত মামলাটির নম্বর ১৫/২০১৮।

আরজি মারফত জানা যায় যে, প্রতিপক্ষ মামলার আবেদনকারীকে মারধোর করেন। এর পাশাপাশি তার মোটর সাইকেলও ভাংচুর করেন। প্রথমে অভিযোগটি ১২/২/২০১৮ তারিখে কচুয়া থানায় দায়ের হয়। অভিযোগটি এখানে কিছুদিন থাকার পর ২১/৭/২০১৮ তারিখে থানা থেকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেফার করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি প্রায় ৫ মাস ধরে শুনানী চলে। এরপর মামলাটি ২২/৭/২০১৮ তারিখে আশ্রাফপুর গ্রাম আদালতে রেফার হয়। গ্রাম আদালতে মামলাটি নথিভূক্ত হওয়ার পর ১৯দিনের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ ইলাহী সুবাসের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক প্যানেল গঠিত হয় এবং ১১/৮/২০১৮ তারিখে মাত্র একদিনের শুনানীতে আদালতে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মামলার প্রতিপক্ষকে গাড়ী ভাংচুরের ক্ষতিপূরণ ও মারধোরের জন্য চিকিৎসা বাবদ মোট ১০,০০০ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তিকে প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়। রায়ে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য যে, ঐ দিনই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি রায়ের ধার্যকৃত টাকা আদালতের মাধ্যমে বুঝে পান।

মামলার আবেদনকারী এবং প্রতিবাদী উভয় পক্ষের সাথে আলোচনান্তে জানা যায় যে, আবেদনকারী মামলাটি যখন থানায় দায়ের করেন তখন সেখানে তার বেশ কিছু টাকা খরচ হয়। এরপর থানা থেকে যখন মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেফার হয়ে আসে তখন সেখানে আইনজীবী নিয়োগ, কোর্ট-ফি, বিভিন্ন কাগজ-পত্র ক্রয়, হাজিরা, যাতায়াত, খাবার ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৫ মাসে আবেদনকারীর প্রায় ২০,০০০ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানা যায়। একইভাবে আদালতে মামলার প্রতিবাদীর খরচ হয়েছে প্রায় ৫০০০ টাকা। অথচ গ্রাম আদালতে মামলাটি নিস্পত্তি হলেও এখানে তাদের কোন খরচই হয়নি এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে তারা ন্যায় বিচার পেয়েছেন।

মামলার আবেদনকারী কেন মামলাটি প্রথমে গ্রাম আদালতে দায়ের করেননি? এর পিছনে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হতে পারে যে, আবেদনকারী হয়তো গ্রাম আদালতের বিষয়টি জানতেন না, অথবা জানলেও এর প্রতি আস্থার ঘাটতি ছিল, অথবা মামলার প্রতিপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের মাধ্যমে জবাব দিতে চেয়েছিলেন। যাহোক মামলাটি বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত গ্রাম আদালতে আসে এবং দ্রুত নিস্পত্তি হয়।

আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় মামলাটি পুলিশ থানা থেকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেফার করা হয়েছে। অথচ মামলটির আর্থীক দাবী ছিল মাত্র ৩৫০০ টাকা সহ চিকিৎসা খরচ আদায় যেখানে গ্রাম আদালতের সর্বোচ্চ ৭৫,০০০ (পঁচাত্তর হাজার) টাকা মূল্যমানের দেওয়ানী ও ফৌজদারী সংক্রান্ত মামলা নিস্পত্তির এখতিয়ার রয়েছে। এখানে ফৌজদারী মামলার ফি ১০ (দশ) টাকা ও দেওয়ানী মামলার ফি ২০ (বিশ) টাকা মাত্র। গ্রাম আদালতে স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলা নিস্পত্তি করার পাশাপশি রায়ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হয়।

কিন্তু এখানে আইনি বাধার কারণে পুলিশ কর্মকর্তাগণ থানা থেকে এ মামলাটি সরাসরি গ্রাম আদালতে রেফার করতে পারেননি। এতে মামলার আবেদনকারী এবং প্রতিবাদী উভয়ই আর্থীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বিষযটি সদাশয় সরকার ভেবে দেখতে পারেন যাতে পুলিশ থানা থেকে গ্রাম আদালতের এখতিয়ারাধীন মামলাগুলো সহজেই গ্রাম আদালতে রেফার করা যায়। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন এবং গ্রাম আদালতও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে। এরফলে মামলার পক্ষদ্বয়কে উচ্চতর আদালত পেরিয়ে আবার গ্রাম আদালতে আসতে হবে না।

এখনো অসংখ্য মানুষ বিরোধে জড়িত হলে কোন কিছু না ভেবেই পুলিশ থানায় ছুটে যায় এবং সেখানে অভিযোগ দায়ের করে। কিন্তু আইনগতভাবে পুলিশ থানার হাতে কোন বিচারিক ক্ষমতা নেই। এ কারণে থানা থেকে অভিযোগগুলো আবার মামলা আকারে উচ্চতর আদালতে রেফার করতে হয়। স্থানীয় বিরোধ স্থানীয়ভাবে নিস্পত্তির জন্যই বাংলাদেশ সরকার আইন করে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত স্থাপন করেছে। তাই গ্রাম আদালতকে সক্রিয় ও যথাযথভাবে কার্যকর করতে পারলে এলাকার সাধারণ মানুষ বিশেষ ক’রে অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকৃত হবেন। এছাড়াও উচ্চতর আদালতে মামলার অস্বাভাবিক চাপ বহুলাংশে হ্রাস পাবে।।  

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।