পুলক সরকার, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুর্ব-পারুলিয়া গ্রামে নিভা রানী নামে এক বৃদ্ধা মা’কে তার স্বচ্ছল ছেলেরা ঠিক মত খেতে পরতে দিতেন না এবং তার উপর গালমন্দসহ শারীরিক মানষিক নির্যাতন করা হতো, যা সহ্য করতে না পেরে ওই বৃদ্ধা মা আত্মহত্যা করেন বলে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন।
বৃদ্ধা নিভা রানী গতকাল বৃহষ্পতিবার কোন এক সময় নিজ শয়ন কক্ষে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত ছেলেরাসহ এলাবাসী।
বৃদ্ধা নিভা রানী পূর্ব-পারুলিয়া গ্রামের মৃত রবি চন্দ্র মন্ডলের স্ত্রী ও অভিযুক্ত ২ ছেলে সুজয় চন্দ্র মন্ডল ও সুজিত চন্দ্র মন্ডলের মা।
সরেজমিনে জানা গেছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলার পূর্ব-পারুলিয়া গ্রামের রবি চন্দ্র মন্ডল তার বিধবা স্ত্রী নিভা রানী এবং তার কর্মক্ষম, সাবলম্বি ও স্বচ্ছল ২ ছেলে সন্তান রেখে মারা যান বেশ ক’বছর আগেই।
ছেলেরা বিয়ে করে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখে দিন পার করলেও তাদের কাছে যেন ভারী বোঝা হয়ে ওঠেন বৃদ্ধা মা নিভা রানী। ঠিক মত মা’য়ের ভরন-পোষন তো দিতেনই না, উপরুন্তু অবহেলা, গালমন্দ ছিল নিত্য দিনের, এমন অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
প্রতিবেশী দিবাকর চন্দ্র মিঠু, একই গ্রামের হাসান ও বৃদ্ধা মর্জিনা জানান, সুজিতের মা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পেয়ে তারা দেখতে আসেন।
তবে নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক প্রতিবেশীদের প্রায় সকলেই অভিযোগ করে বলেন, অবহেলা আর অনাদরের পাশাপাশি খেতে চাইলেই প্রায়ই তার উপর চলত শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন। শুধু ছেলেরাই নয়, পুত্রবধূদেরও যেন পথের কাঁটা ছিলেন অসহায় বৃদ্ধা নিভা রানী। এ ভাবেই ছেলে আর পুত্রকধূদের অবহেলা আর অযত্নে দিনের পর দিন অর্ধাহারে, অনাহারে আমৃত বেঁচেছিলেন এই দুঃস্থ মা। অবশেষে জীবনের পড়ন্ত বেলায় কষ্ট সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে এ জনমের ক্ষুদা নিবারন করে পর পাড়ে যেতে পারেন, এমন অভিযোগ গ্রামাবাসীদের।
এ ব্যাপারে বৃদ্ধার এক ছেলে দায়সারা বক্তব্য পাওয়া গেলেও শত চেষ্টাতেও দেখা মেলেনি অপর অভিযুক্ত ছেলেকে।
মৃত রবি চন্দ্র মন্ডল ও নিভা রানীর অভিযুক্ত ছেলেদের একজন সুজিত চন্দ্র মন্ডল জানান, ‘এলাকাবাসী যা বলছেন, তা তাদের আক্ষেপ ও আবেগের কথা, মা’র সাথে এগুলো কখনোই ঘটেনি, এলাকাবাসী আমাদের উপর ক্ষুব্ধ কেন, তাই তো বুঝি না… এখন আপনারা যা ভালো মনে করেন, তাই করেন।
জয়পুরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহরিয়ার খান বলেন, “বৃদ্ধা নিভা রানীর প্রতি তার ছেলে ও পুত্রবধুদের অবিচার জুলুমের শিকার হয়ে ওই বৃদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন, এলাবাসীদের এমন অভিযোগে গতকাল বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ নিভা রানীর মৃতদেহটি অভিযুক্ত ছেলেদের কাছে হস্তান্তর করলে গত রাতেই তাকে দাহ করা হয়।
তবে বিষয়টি পুলিশ খতি দেখছে, এ ছাড়াও এ ব্যাপারে যাদি কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়, সব দিক বিবেচনা করে তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমান হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ওসি ।
বৃদ্ধা মা নিভা রানীর করুন পরিনতির বিচার চেয়ে এলাকার বৃদ্ধ মা-বাবাসহ সচেতন এরলাকাবাসী। জীবনের শেষ দিনগুলোর অপেক্ষমান বৃদ্ধদের আর যেন নিভা রানীর মত করুন পরিনতি পোহাতে না হয়, এমন দাবী সচেতন মহল।