ঢাকাFriday , 27 August 2021
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নড়াইলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর এখন গলার কাটা দুইমাস ধরে পানিতে হাবুডুবু 

Link Copied!

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
নড়াইলের কালিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ঘর এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। বিলের মধ্যে করা ঘরে দুইমাস ধরে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৮টি পরিবার। অসহায় লোকগুলো ঘর উপহার পেয়েও বাস করতে পারছে না,উপরন্ত পরের বাড়িতে থাকা আর রাতে সাপের ভয়ে দিনপার করছে,প্রাকৃতিক কাজ সারছে এখানে সেখানে। শুধু এটিই নয় নীচু জায়গায় ঘর তৈরী করায় নোয়াগ্রাম এবং কুলশুর আশ্রয়ন প্রকল্পের একই দশা। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি ইউনিয়নের আটঘরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন পাশের কালডাঙ্গা, বনগ্রাম, সরকেলডাঙ্গা, আরাজী বাসগ্রাম, আটঘরিয়া, কলিমন ও আটলিয়া গ্রামের বাস্তুহারা মানুষ। স্থাযীভাবে পাকা ঘর এবং জমি পেয়ে সকলেই অত্যন্ত খুশী হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন,কিন্তু মাস না যেতেই সেই খুশীর ঘরই এখন তাদের গলার কাটা না পারছেন ঘর ছেড়ে যেতে আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবারও উপায় নেই। যশোরের নওয়াপাড়ায় একটি মিলে কাজ করতেন দিনমজুর মোস্তফা শেখ। স্ত্রী,ছেলে,ছেলে বৌ সব মিলিয়ে ভাড়ায় থেকে ৩িনানিপাত করছিলেন। এলাকায় সরকার ঘর দিচ্ছে এই খবরে সব ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে নতুন ঘরে ওঠেন। এর ওর জমিতে খেটে শেষ জীবনে এলাকার মানুষের সাথে কাটাবেন এই ছিলো স্বপ্ন। তার স্বপ্ন নষ্ট করে দিলো বিলের পানি। এখন নিরাপদে থাকা তো দুরের কথা,গত দুইমাস ধরে হাটু পানিতে চলছে তার সংসার।
শুধু মোস্তফাই নয় ইজ্জত আলী, আসমাউল, শিল্পী, হেলাল উদ্দির এর মতো আটঘরিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের ১৮টি পরিবারের ৭০জন মানুষ দুইমাস ধরে দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছে।
সামনে পানির মধ্যে পুরো আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো ভাসছে প্রায় ৩ ফুট পানিতে। পাশের একটু উচু জায়গায় চুলা তৈরী করে সেখানে পালাক্রমে রান্না চলছে,বৃষ্টিতে তাও বন্ধ হয়ে যায়। ভিতরে ঢুকতে গেলে কোথাও হ্টাুপানি আবার কোথাও বেশী। ঘরের ভিতরে দিনরাত পানি সেচে চলেছেন নারীরা। ঘরের মধ্যে পাকা বাথরুমে হাটুপানি তাই রাতের বেলা এখানে-সেখানে প্রাকৃতিক কাজ সারছে নারীরা। একে পানিতে একাকার,এরপর অভিযোগ রয়েছে নিম্নমানের নির্মানের। কয়েকটি ঘরের মেঝে দেবে গিয়ে ফেটে চৌচির।কাদা দিয়ে তা লেপে রাখার চেষ্টা চলছে। কারো ঘরে জ¦ালানী আর জামাকাপড় একসাথে রাখা রয়েছে,পানিতে ভাসছে খাবারের হাড়ি। পানির মধ্যে দাড়িয়ে খেয়ে আবার সেই পানিতেই হাত ধুয়ে নিচ্ছেন।
এটা দিনের চিত্র, রাতের অবস্থা আরো ভয়াবহ। বিদ্যুতের ব্যবস্থা এখনও হয়নি,তাই সন্ধ্যা হলেই ঘরের মধ্যে পারি উপর পাতা খাটে কোনরকমে সাপের ভয়ে জবুথুবু হয়ে বসে থাকেন নারীরা। ছোট শিশুদের পানিতে ডুবে যাবার ভয়ে মায়েরা জেগেই রাত কাটাচ্ছেন। বিলের পানিতে থাকা সাপ ঢুকে পড়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের পানিতে,কয়েবজনকে এরমধ্যে কামড়িয়েছে।বিলের মধ্য থেকে অনায়াসে নৌকা নিয়ে পুরো এলাকায় যাচ্ছেন লোকেরা। বন্যার চেয়েও এক ভয়াবহ চিত্র এই আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। মোস্তফা শেখ বলেন, ঘর পেয়ে খুব ভালো লাগছিলো, জীবনে এমন ঘর করতি পারবো না। এহন যে ঘর দেখতিছি তার চেয়ে পলিথিনির কুড়ে দিলিও ভালো থাকতাম। মেঝে কোনরকমে সিমেন্ট লেপে গেছে,তা উঠে গর্ত তৈরী হচ্ছে,পিলারে খেমছি(চিমটি) দিলি গুড়ো গুড়ো হয়ে পড়তিছে।পাকা বাড়ির সাধ মিটে গেছে।
৭০ বছরের কোহিনুর বেগম বলেন,এর চাইতে রাস্তার উপর ছিলাম শান্তিতে ছিলাম। এন্নে(এখন) মাঠের তে রাইন্ধে ঘরে আইনে পানিতি দাড়ায় খাচ্ছি,বাথরুমের জ¦ালা,পানি খাওয়ার জ¦ালা,ঘুমানোর জ¦ালা। সরকার কি শান্তিতি রাহিছে আমাগে।
৬৫ বছরের তাসলিমা বেগম বলেন,পানিতে ভাইসে রইছি আজ দুইমাস। রান্নার জায়গা নাই,বাথরুমের জায়গা নেই-কেউ পটে করতিছি কেউ পরের বাগানে যাচ্ছি। সরকার তো আমাগের খোজও নেলো না।
আরেক বাসিন্দা আসমাউল শেখ জানান,সরকারী বাড়ি পাইয়ে ও আমরা এর ওর বাড়ি থাইকে বেড়াচ্ছি,তালি এই ঘর পাইয়ে আমাগের কি কাজ হলো?
পুস্পরানী বলেন,ছোট ছেলে নিয়ে থাকি একে সাপের ভয় এরপর পানিতে পড়ে যাবার ভয়। পানির মধ্যে ছেলেরে খাটে ঘুমাতে দিয়ে জেগে থাকি। আমাগের এই কষ্টডা একটু ভালো করে লেখেন। বন্যার চেয়েও ভয়াবহ পরিবেশ হলেও দেখার কেউ নেই।সরকারী ঘর পেয়েও এর ওর বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে অসহায় এসব মানুষের। আবার সেই ছিন্নমুল জীবন শুরু হতভাগ্য মানুষগুলোর
রওশন আরা বলেন,সরকারী ঘর পেয়ে তো ভালই লাগছিলো,এখন মনে হচ্ছে পানির মধ্যে থাকবো কিভাবে এখন তো আগের জায়গায় ফিরে ও যেতে পারবো না। বাথরুমের জায়গা নেই,পরের জায়গায় বাগানে গেলে তারা ধমক মারে নারীরা যেখানে সেখানে বসতেও পারি না,আমাদের এ কোথায় এনে বসালো সরকার?
কালিয়া উপজেলায় সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুল ইসলাম বলেন, এটা জোয়ারের পানি এসেছে,আমরা রিং বাধ তৈরী করে সমস্যা সমাধান করে ফেলবো। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযেগে চেষ্টা করা হলেও মিঠিং এ থাকার কারনে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।