ঢাকাSaturday , 5 November 2022
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আক্রান্ত ইমরান খান এবং কঠিন বাস্তবতায় পাকিস্তানের রাজনীতি

Link Copied!

পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের ওপর সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে আরও অস্থির হয়ে উঠতে যাচ্ছে পাকিস্তানের রাজনীতি। এই হামলায় সন্দেহভাজন হামলাকারী গ্রেফতার হলেও হামলার জেরে পিটিআই সমর্থকরা তাদের আন্দোলনকে আরও কঠিনভাবে এগিয়ে নেবে, সন্দেহ নেই। গুলিবিদ্ধ ইমরান খান তার দলের সমর্থকদের উদ্দেশে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন লংমার্চ কর্মসূচিকে চালিয়ে যেতে। সুতরাং এখানে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যেভাবে পুলিশ এবং অপরাপর আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিহত করার একটা প্রবণতা ছিল সেটা অনেকটা দুর্বল হবে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ হামলার পরপরই এক বিবৃতিতে এই ধরনের জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সরকারের শরিক পিপিপি চেয়ারম্যান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টোও এই হামলায় তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। নিন্দা জানানো হয়েছে সেনাবাহিনীর তরফ থেকেও। আসলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতা দখলের একধরনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও বাস্তবিক অর্থে এ ধরনের হামলা পাকিস্তানের যেকোনো রাজনীতিবিদেরই কিছুটা শঙ্কিত করে তোলে।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাটলে আমাদের কিছুটা চমকিত হতে হবে। এ রকম অনেক জঘন্য ঘটনার নজির রয়েছে। দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে রাওয়ালপিন্ডির জনসভায় প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় ফাতেমা জিন্নাকেও, যদিও বলা হয়েছিল যে তিনি নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বেরিয়ে আসে যে তার মৃতদেহের গোসলের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা তার তলপেটসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন। বিষয়টি অসমর্থিত হলেও আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন সময়। সেনাবাহিনীর ছায়াতলে আশ্রিত অপর রাজনৈতিক নেতা জুলফিখার আলি ভুট্টোকেও পরবর্তীকালে ১৯৭৭ সালে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় ভুট্টো কন্যা এবং পরবর্তীতে পিপিপি নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে। প্রথম দফার হামলায় হত্যা করা সম্ভব না হলেও দ্বিতীয় দফায় ২০০৭ সালে এ ধরনের মিছিলেই গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এর বাইরে এখন ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্না এমনকি পাকিস্তানের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
অনেকদিন ধরেই পাকিস্তানের রাজনীতির পর্যবেক্ষণে এবং ইমরান খানের সরকারবিরোধী এবং একই সাথে সেনাবিরোধী অবস্থান – এই দুই মিলে তার রাজনীতির সাথে নিজের ব্যক্তিজীবনের নিরাপত্তাকে কঠিন করে তুলছিল। তার ওপর হামলা বা কোনো ধরনের অপচেষ্টা করা হচ্ছিল সেটা তিনি নিজেও আঁচ করতে পারছিলেন। সম্প্রতি দেখা গেছে তিনি অনেকটা নিজের জীবনকে বাজি ধরেই সরকার এবং একই সাথে সেনাবিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সরকারের পাশাপাশি তিনি সেনাবাহিনীকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বারবার। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের জন্য এ যেন আগুন  নিয়ে খেলা!
এ প্রসঙ্গে একটি প্রাসঙ্গিক ঘটনার অবতারণা করা যেতে পারে। গত ১ নভেম্বর তার লংমার্চ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গুজরানওয়ালাতে এক পথসভায় নিজের আন্দোলনকে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও তাকে সরকার গঠন করতে না দেয়ার কারণ পাকিস্তানের ভাঙনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। ইমরান বলেন, ‘সবাই জানে মুজিবুর রহমান ও তার দল ১৯৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে একজন চতুর রাজনীতিবিদ (জুলফিকার আলী ভুট্টো) আওয়ামী লীগ এবং সেনাবাহিনীকে সংঘাতের পথে ঠেলে দিয়েছিল। বর্তমানে নওয়াজ শরীফ এবং আসিফ জারদারি একই ভূমিকা পালন করছেন। তারা পিটিআই- এর ক্ষমতার ফিরে যাওয়ার যাত্রাকে বাধা দেয়ার জন্য একইভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’
ইমরান খানের উপরোল্লিখিত বক্তব্যকে কেবল একটি জনসভায় দেয়া একটি রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। তিনি যেন এই কয়েকটি কথার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের গোটা রাজনৈতিক চিত্রকে খুব সত্য করে তুলে ধরেছেন! রাজনৈতিক নেতারা পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে তাদের ব্যক্তিস্বার্থকে চরিতার্থ করার প্রয়াসে বারবার দেশের সাথে বেঈমানি করেছেন এবং এর খেসারত দিয়েছেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে পিটিআই-এর বাইরে পিপিপি কিংবা মুসলিম লীগ- এদের জন্ম ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় দুটো দলেরই উত্থান হয়েছে সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায়। এদের রাজনৈতিক বিবর্তনেও সবসময় দেখা যায় সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন ভূমিকা। ১৯৮৮ সালে বিমান দুর্ঘটনায় তৎকালীন সেনাশাসক জিয়াউল হকের মৃত্যুর পর বাধ্য হয়ে জাতীয় নির্বাচন দেয়ার পর পিপিপি সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। সঙ্গত কারণেই দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় তারই মনোনীত রাষ্ট্রপতি গোলাম ইসহাক খানের মাধ্যমে পদচ্যুত হন তিনি। মধ্যবর্তী নির্বাচনে মুসলিম লীগ বিজয়ী হয়ে আসলে নওয়াজ শরীফ প্রধানমন্ত্রী হন এবং একইভাবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দুই বছরের মাথায় পদচ্যুত করা হয় তাকে, আবারও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন বেনজির ভুট্টো এবং একইভাবে আবারও তারই মনোনীত রাষ্ট্রপতি ফারুক আহমেদ লেঘারী কর্তৃক পদচ্যুত হন তিনি। আবারও মধ্যবর্তী নিরবাচনে নওয়াজ শরীফ বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হলে এবার আর সেই পথে না হেঁটে সরাসরি দায়িত্ব নিয়ে নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ, (যাকে অন্তত ৫ জন সিনিয়রকে বঞ্চিত করে সেনাপ্রধান করেন নওয়াজ) যিনি ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর প্রবল জনবিক্ষোভের মুখে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বাস্তবিক অর্থে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা দৃশ্যমান থাকলেও সেনাবাহিনীর অপ্রাকাশ্য প্রভাবকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেসামরিক সরকারগুলোর জন্য সরকার পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ে। সে কারণে প্রায়ই তাদের সেনাবাহিনীর ইচ্ছার কাছে নিজেদের সমর্পণ করতে হয়।
এখানে নওয়াজ শরীফ ও আসিফ আলী জারদারি যে দুজনের কথা ইমরান খান প্রকাশ্যে উচ্চারণ করে থাকেন, এদের দুজনের কেউই এখন প্রকাশ্যে তাদের স্ব স্ব দলের রাজনীতির দৃশ্যপটে না থাকলেও এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তারাই মূল ভূমিকা পালন করেন। এদের দুজনেই জানেন যে এই মুহূর্তে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ সাধারণ সাধারণ নির্বাচন হলে ইমরান খানকে পরাজিত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। এক ইমরানকে ঠেকাতে গিয়ে তাদের দিক থেকে হেন কোনো অপতৎপরতা নেই, যা করা হচ্ছে না। আজকের আসিফ আলী জারদারির রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা তার পত্নী বেনজির ভুট্টোর মাধ্যমে। অথচ স্ত্রী হত্যার জন্য প্রতিবাদী হতে দেখা যায়নি তাকে, এমনকি ৫ বছর তার দল পিপিপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালেও তিনি রাষ্ট্রপতি থাকলেও বেনজির ভুট্টোর হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি। যদিও তার ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো বর্তমানে দলের চেয়ারম্যান, তারপরও বাবা হিসেবে দলটির মূল কৌশল তিনিই নির্ধারণ করেন। নওয়াজ শরীফ নিজে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করে তার ভাই শাহবাজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে মূলত চাইছেন যেকোনোভাবে ইমরানকে ঠেকিয়ে পরবর্তীসাধারণ নির্বাচনে নিজেদের বিজয়কে আরও পোক্ত করতে। এরপর নিজে দেশে ফিরে আবারও রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে পোক্ত করবেন। আসলে ষড়যন্ত্রের এই রাজনীতির মধ্য দিয়ে কার্যত প্রতিবারই রাজনিতিবিদরা নিজেরাই আত্মঘাতী হচ্ছেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে বরাবরই দেখা যাচ্ছে রাজনীতিবিদদের প্রতি অপতৎপরতায় কোনো না কোনো উপায়ে তারা নিজেরাই জড়িয়ে যাচ্ছেন।
সবশেষে ইমরান খান তার আন্দোলনকে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর ৩ দিনের মধ্যে তিনি যেভাবে আক্রান্ত হলেন, আমার মনে হয় এটাই শেষ নয়। এক কঠিন সংগ্রামে নিজেকে নিবেদিত করেছেন তিনি। রাজনীতিতে তিনি একাধারে সরকার এবং সেনাবাহিনীর বিপরীতে। তার ওপর হামলায় স্বাভাবিকভাবেই আগামী দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তাল থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়বে। সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে। পিটিআই –এর সাথে পিপিপি এবং মুসলিম লীগের মধ্যে সংঘাত আরও অনিবার্য হয়ে পড়ছে। এর জেরে পিপিপি এবং মুসলিম লীগের জোট সরকারের ভাঙনও যদি অনিবার্য হয়ে পড়ে তাহলে দেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে যদি সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে, সেক্ষেত্রে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কলাম লেখক
ড. ফরিদুল আলম
অধ্যাপক আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।