ঢাকাFriday , 28 June 2019
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

“স্বপ্নবাজ আয়রনম্যান”এর ৪৮এ পদার্পণ

Link Copied!

ফয়সাল আরেফিন: প্রযুক্তি ও ব্যবসার খোঁজ খবর রাখনে অথচ ইলন মাস্কের নামের সাথে পরচিত নন – এমন মানুষ হয়ত একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেড় লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক বিলিয়োনার ব্যবসায়ী, যাকে New York Times “ধাতব স্যুটবিহীন আয়রনম্যান ” বলে ঘোষণা করছে সেই ইলন মাস্ক এর কথাই বলা হচ্ছে। আজ সেই বাস্তব জগতের “আয়রনম্যান” ইলন মাস্ক এর ৪৮ তম জন্মদিন।
পুরো নাম ইলন রিভ মাস্ক। ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা কানাডিয়ান এবং বাবা দক্ষিণ আফ্রিকান। জন্মের পর ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি আফ্রিকায় ছিলেন। এরপর কানাডায় চলে আসেন।

ইলন মাস্কের ছেলেবেলাটা বেশ বৈচিত্র্যময়। মাত্র নয় বছর বয়সেই তার বাবা-মার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছিলো। এই মানসিক ধাক্কা সামলাতেই তিনি কম্পিউটারের সাথে সময় কাটানো শুরু করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজে নিজেই প্রোগ্রামিং শিখে একটি ভিডিও গেমসও বানিয়ে ফেলেছিলেন। এবং সেই গেম একটি ম্যাগাজিনের কাছে ৫০০ ডলারে বিক্রিও করেন দেন তিনি!

বর্তমানে অনেকগুলো পরিচয়ে পরিচিত ইলন মাস্ক। তিনি একাধারে একজন উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী। ‘মানব কল্যাণে বিজ্ঞান’’ এই ধারণা নিয়ে তিনি কাজ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। সম্পূর্ণ একটি মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্বপ্নদ্রষ্টা এ মানুষটি সোলার সিটি, স্পেসএক্স আর টেসলা মটর নিয়ে বলেন, “আমি যেসব জিনিস নিয়ে কাজ করি তাঁর পেছনে রয়েছে এক স্বপ্ন। আমার স্বপ্ন এক পরিবর্তিত নতুন পৃথিবীর, যা হবে আরও মানবিক।” তার লক্ষ্য বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে এনে যান্ত্রিক শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহার করা। তার নতুন স্বপ্ন তো কল্পনাকে হার মানানোর মতো – ‘মানব জাতির টিকে থাকার ঝুঁকি’ মোকাবেলায় ভিন গ্রহে বসতি স্থাপন। তার প্রথম লক্ষ্য হলো মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি গড়ে তোলা। ইলন মাস্কের এই স্বপ্নটি সারা বিশ্বে পরিচিত ‘মেকিং লাইফ মাল্টিপ্ল্যানেটারি’ নামে।
মাস্ক ছোটবেলায় বাবার সাথে আফ্রিকায় থাকাকালীন সেখানকার স্থানীয় বেসরকারি স্কুলগুলোতে পড়ালেখা করেন। ১৯৮৯ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মা কানাডিয়ান হওয়ার সুবাদে সহজেই কানাডার নাগরিকত্ব পেয়ে যান। অতঃপর সেখান থেকে ১৯৯২ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়াতে অর্থনীতি ও পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনার জন্য। অর্থনীতিতে প্রথম ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করার পর দ্বিতীয় ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন পদার্থবিজ্ঞানে। সেখান থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন এনার্জি ফিজিক্সে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য।
মজার ব্যাপার হলো, ইন্টারনেট বিপ্লবের সূচনা ও এর অপার সম্ভাবনা অনুধাবন করতে পেরে মাত্র ২ দিন পরই পিএইচডি প্রোগ্রাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন।
১৯৯৯ সালে কয়েকজন সহনির্মাতার সঙ্গে এক্স ডট কম নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা সাইট চালু করেন ইলন মাস্ক। যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী পেপাল (PayPal) হিসেবে পরিচিতি পায়। শুরুতে এই সেবাটি খুব একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও বর্তমানে এটি ইন্টারনেট ভিত্তিক টাকা লেনদেনের সবচেয়ে বড় ও নিরাপদ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
পেপ্যাল সম্পর্কে নতুন উদ্যোক্তাদের ইলন মাস্ক বলেন, আমরা যখন কিছু তরুণ পেপ্যাল প্রতিষ্ঠা করি তখন মানুষ আমাদের এই সেবাকে বুঝে উঠতে পারেনি। পরে আমরা যখন তাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি, তখন ধীরে ধীরে মানুষ এই সেবা গ্রহণ করতে থাকে। আজ যদি আপনারা পেপালের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন, প্রতিষ্ঠানটি কত সুন্দর সেবা দিয়ে চলেছে।

২০০২ সালে মাস্ক তাঁর যুগান্তকারী মহাকাশযান তৈরি ও উড্ডয়ন প্রতিষ্ঠান “স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন” বা স্পেসএক্স (SpaceX) এর যাত্রা শুরু করেন।
স্পেসএক্স থেকে এমন রকেট তৈরি করা হয় যেগুলো প্রচলিত রকেটের চাইতে অনেকগুণ বেশী সস্তা কিন্তু কার্যকারিতার দিক দিয়ে অন্য যেকোনো রকেট তৈরিকরণ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শীর্ষে অবস্থান করছে।
এটিই একমাত্র প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে প্রথম কোন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়।
এমনকি, স্বয়ং নাসা’ও স্পেসএক্সের সাথে চুক্তি করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে মালামাল পৌঁছানো এবং নাসার নিজস্ব মহাকাশযানের বদলে স্পেসএক্স এর যানে মহাকাশচারী আনা নেয়ার ব্যাপারে। কারণ স্পেসএক্সের মহাকাশযানগুলো একাধিকবার ব্যবহারোপযোগী।
সম্প্রতি ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট তথা কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু ১’ ফ্লোরিডা থেকে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ রকেটে করে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই উড্ডয়নেও সর্বক্ষণ তদারকি করেছেন ইলন মাস্ক।

২০০৩ সালের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি টেসলা মোটরস। গাড়ি প্রেমিকদের কাছে টেসলা এক আভিজাত্য ও সৃজনশীলতার প্রতীক। যদিও কোম্পানির শুরুতে মাস্ক এই কোম্পানির কোনো আনুষ্ঠানিক দায়িত্বে ছিলেন না। ২০০৪ সালে তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। মাস্ক টেসলাতে যোগদান করার পর কোম্পানিটি নতুন করে যাত্রা শুরু করে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ২০০৮ সালে টেসলা স্পোর্টস কার এর একটি নিজস্ব এডিশন ‘রোডস্টার’ বাজারজাত করে। যা তৎকালীন সময়ে গাড়ি প্রেমিকদের নিকট আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এছাড়াও এই কোম্পানি থেকে ইলেকট্রিক সিডান “Model-S”, “মডেল ৩ সিডান” বাজারে আনা হয় যা গাড়ির জগতে রীতিমত শোরগোল ফেলে দেয়। চলতি বছরেই টেসলা সেমি নামে একটি ট্রাক প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে যা একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ দিলেই প্রায় ৫০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারবে। সেই সাথে কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গাড়িটির ব্যাটারি ও মোটর ১ মিলিয়ন মাইল ভ্রমণ পর্যন্ত কোনও সমস্যা ছাড়াই চলবে।
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়ির মর্যাদা পাওয়া রোডস্টার এর নতুন এডিশন ২০২০ সালে বাস্তবতার মুখ দেখবে বলে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, টেসলা কোম্পানির নামকরণ করা হয় কিংবদন্তী বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার নামানুসারে।
২০০৬ সালে ইলন এবং তাঁর দুই আত্মীয় মিলে গড়ে তোলেন সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সোলারসিটি। ২০১৬ সালে মাস্ক এটিকে সম্পূর্ণ টেসলার অধীনে নিয়ে আসেন। বর্তমানে দুই প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শেয়ারই তাঁর।
এই চুক্তির ব্যাপারে টেসলার ওয়েবসাইটে নিচের লেখাটি প্রকাশিত হয়:
“সৌরশক্তি এবং এর ব্যবহারকারী সবথেকে ভাল কাজ করে যখন তারা একই জায়গায় থাকে। টেসলা (ব্যবহারকারী) এবং সোলার সিটি (সৌরশক্তি উৎপাদনকারী) একসাথে এমন সব সুনির্মিত, বানিজ্যিক পন্য প্রস্তুত করতে পারবে যা শক্তি প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ধারনাই বদলে দেবে।”

রোজকার ট্রাফিক জ্যামে আমাদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অপচয় হয়, এ বিষয় নিয়েও ভেবেছেন ইলন মাস্ক। তিনি আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কারের পরিকল্পনা করেছেন! তিনি একটি টানেল নির্মাণকারী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি ঐ কোম্পানির নাম দেন “দ্য বোরিং কোম্পানি”।
উক্ত খননকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রথম কাজ ছিল লস এঞ্জেলসে অবস্থিত স্পেসএক্স এর আওতাভুক্ত জমিতে পরীক্ষামূলক খননকার্য চালানো। প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গণমাধ্যমে উক্ত প্রজেক্টের আপডেট দিতে দেখা যায় তাকে।

২০১৩ এর অগাস্টে ইলন মাস্ক যাতায়াতের আরেকটি নতুন পদ্ধতির কথা ঘোষণা দেন যার নাম তিনি দেন “হাইপার লুপ”। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অল্প সময়ে বড় বড় শহরগুলোতে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। ক্যাপসুলের মতো দেখতে এই যান একটি লো প্রেশার টিউবের নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে ঘণ্টায় ৬০০ মাইলের বেশি গতিতে চলতে পারবে।
এক ইন্টারভিউএ ইলন এর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এটি কিভাবে কাজ করবে! জবাবে তিনি বলেন, “এটি হবে একটি টিউব কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। টিউবটি একটি দেশের বিভিন্ন শহরে কিংবা কয়েকটি ভিন্ন দেশে যুক্ত থাকবে। টিউবের ভেতর থাকবে ক্যাপসুল আকৃতির যান, এ ধরনের ক্যাপসুলে চড়ে ঘণ্টায় ৬০০ মাইল বেগে ভ্রমণ করা সম্ভব হবে। যেহেতু টিউবটি হবে সম্পূর্ণ বায়ু-মুক্ত, কাজেই এতে ঘর্ষণ থাকবে না বললেই চলে।”
এই প্রোজেক্ট সফল হলে ঢাকা – চট্টগ্রাম এর দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট!

২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যখন বিশাল অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনা ঘোষণা দেন তা বাস্তবায়নে সে বছরই ডিসেম্বরে ট্রাম্পের কৌশল ও নীতি বিষয়ক ফোরামে ইলন মাস্ক’কে আহ্বান জানানো হয় এবং তার পরের বছর তিনি ট্রাম্পের “ম্যানুফ্যাকচারিং জবস ইনিশিয়েটিভ”- এ যোগ দেন। বিতর্কিত ট্রাম্প প্রশাসনে তাঁর যুক্ত হওয়ার মূল লক্ষ ছিল মূলত সৌরশক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর যাত্রাকে গতিশীল করা আর এর ফলে লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে তার সে মহৎ উদ্দেশ্য সফল হয়নি, সেই বছরের ১ জুন ট্রাম্প প্যারিসে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করায় মাস্ক তাঁর উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

স্বপ্নবাজ এই মানুষটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার এবং স্বীকৃতি লাভ করেন।
এছাড়াও ২০১৩ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বর্ষসেরা বিজনেস ব্যক্তিত্বে ভূষিত হন।
বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় ২০১৯ সালে পৃথিবীর শীর্ষ ১০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ৪০ তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নেন।

ইলন মাস্ক তাঁর জীবনকে নিবেদিত করেছেন মানুষের জীবনকে আরও সহজ করা এবং পৃথিবী ও পৃথিবীর বাইরের জগতকে মানুষের জন্য বসবাসের আরও উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রয়াসে। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর স্বপ্নের আরও কাছে এগিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো তাঁর হাত ধরেই আমরা একদিন মানবজাতির ভিন গ্রহে বসবাসের বহু বছরের স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখব। এই প্রখর প্রতিভাবান ও অসাধারন সফল মানুষটির জীবন থেকে আমরা সবথেকে বড় যে শিক্ষাটি নিতে পারি তা হল স্বপ্ন যত বড়ই হোক, বিশ্বাসের সাথে কাজ করে গেলে সাফল্য আসবেই।

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।