গাইবান্ধা প্রতিনিধি: হতদরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী রাশেদুল ইসলাম পেশায় নরসুন্দর (নাপিত) স্বপ্ন দেখছেন প্রাচীনতম মুদ্রা যাদুঘর তৈরি করার। তিন বেলা ঠিক মতো খেতে না পারলেও তার সেদিকে খেয়াল নেই। সেলুন ব্যবসা করে সারাদিন যা রোজগার হয় তা দিয়েই মুদ্রা ক্রয় করেন তিনি। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। তবুও তার স্বপ্ন এক সময়ে যে মুদ্রা দিয়ে দেশ-বিদেশে বিনিময় হতো সেই প্রাচীনতম মুদ্রা যাদুঘর গড়ার। তাই বিগত ১৮ বছর ধরে শুরু করেছেন আদিযুগের প্রাচীনতম ধাতব মুদ্রা থেকে বর্তমান সময়ের বিলুপ্ত আধা পঁয়সা থেকে পাঁচ টাকার কয়েনসহ প্রায় ৪০ প্রকারের নোট টাকা ও পঁয়সা সংরক্ষণ। এরই মধ্যে এলাকায় ব্যাপক সাড়া মিলেছে তার গড়ে তোলা ক্ষুদ্র ”বিপ্লব পঁয়সা মহল”। এ ছাড়াও তার মুদ্রা যাদুঘরে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ত্রিশটির মতো দেশের প্রচলিত ও বিলুপ্ত ধাতব মুদ্রা ও নোট টাকা। রাশেদুল এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অর্থনীতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য নামক সেমিনারের মধ্যে দিয়ে ভবিষৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছেন তার মুদ্রা যাদুঘর। বিগত ২০০০ সালে রাশেদুলের মাথায় আসে যাদুঘর তৈরি করার চিন্তা। এরপর থেকে মুদ্রা সংগ্রহ শুরু করেন তিনি।
এলাকার লোকজন তাকে পয়সা প্রেমিক বলে ডাকে। বিগত কয়েক বছর ধরে বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত আত্বীয়স্বজনের কাছ পুরোনো, অচল ও দেশী বিদেশী পয়সা সংগ্রহের মাধ্যমে তৈরি করেছেন বিলুপ্ত পয়সার বিশাল সংগ্রহশালা। যেখানে রয়েছে আদিযুগ থেকে আজ অবধি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিলুপ্ত পয়সাকরি। তিনি তার ছেলের নামে এই সংগ্রহশালার নাম দিয়েছেন“বিপ্লব পয়সা মহল”।
এই বিশাল বিলুপ্ত পয়সার সম্ভার দেখতে প্রতিদিনই ভীর করে এলাকার ঊৎসুক জনতাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা। তার আশা ও স্বপ্ন বিলুপ্ত পয়সার এই সংগ্রহশালাকে ভবিষ্যতে রুপ দিতে চান জাদুঘরে রুপান্তরিত করে। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রাশেদুলের পয়সার সংগ্রহশালা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রর্দশনীর মাধ্যমে বেশ সুনামও অর্জন করেছে। রাশেদুলের পয়সা মহলে স্থান পেয়েছে অতীতের বিভিন্ন রাজা বাদশার আমলে ব্যবহ্রত পয়সাসহ স্বর্ণমুদ্রাও। আদিযুগে পয়সা বা মুদ্রার প্রচলন ছিল না, তখন বিনিময় প্রথা চালু ছিল। এরপর বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মানুষ কড়ি ব্যবহার করত, তারপর ধীরে ধীরে পয়সার প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু সেই সব আদি পয়সা এখন বিলুপ্ত । রাশেদুল আদিযুগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত পয়সা সংগ্রহের মাধ্যমে আধুনিক প্রজন্মের কাছে অতীত ইতিহাস তুলে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের জামাল গ্রামে নিজ বাড়িতে গিয়ে কথা পয়সা প্রেমিক রাশেদুলের সাথে তিনি বলেন, আমাদের দেশেও বিগত কয়েক বছর আগেও, পাঁচ পয়সা, দশ পয়সার প্রচলন ছিল। বর্তমানে পয়সার যুগ বিলুপ্তির পথে এই ধারনা থেকে পয়সা সংগ্রহ শুরু করি। অনেক দিনের চেষ্টায় আমার এ সংগ্রহশালায় অচল, বিলুপ্ত, দেশী বিদেশী প্রায় দশ হাজার পয়সা রয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাঙ্গালী তথা বিশ্বের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারে প্রর্দশনীর ব্যবস্থা করি। তিনি বলেন তার পয়সার এই সংগ্রহশালাকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মকে জানান দেওয়া একমাত্র লক্ষ্য। রাশেদুল নির্দিষ্ট একটা জায়গা কিংবা ঘর স্থাপনের জন্য প্রশাসন ও সরকারের পাশে দাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
তার বাড়িতে পয়সার সংগ্রহশালা দেখতে আসা পাশের গ্রামের মামুন মিয়া বলেন, রাজা বাদশার সময়ের পয়সাগুলো দেখে আমার খুবই ভাল লেগেছে এবং অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে একটা ধারনা হয়েছে।তিনি প্রশাসন বা সরকার রাশেদুলের পাশে দাড়ানোর অনুরোধ জানান।
রাশেদুলে পয়সা মহলের ব্যাপারে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, সুন্দরগঞ্জের রাশেদুলের পয়সা সংগ্রহশালার বিষয়ে আমি অবগত, এবং নিজেও দেখেছি। এ নি:সন্দেহে একটা ভাল উদ্যোগ। সে অতীত ও বর্তমানের সাথে একটা যোগসুত্র স্থাপন করে যাচ্ছে। এবং বর্তমান প্রজন্ম অতীত ইতিহাস সম্পর্কে অবগত হচ্ছে। তার এ ব্যতিক্রম উদ্যেগের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলব। আপাদত একটা নিদিষ্ট জায়গার ব্যাপারে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি।