উজ্জ্বল রায়,মাগুরার মহম্মদপুর থেকে ফিরে■ রবিবার (২,জুন) রাজা সীতারাম রায়ের ৩শ বছর পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক পালঙ্কে ঘুমান ডিসি! ১৬৮৬ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজসভা থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন সীতারাম রায়। দৌর্দ- প্রতাপশালী এই রাজার রাজত্বের সীমারেখা ছিল উত্তরে পাবনা এবং দক্ষিণে সুন্দরবন পর্যন্ত। আর মাগুরার মহম্মদপুরে গড়ে তোলেন রাজধানী। কীর্তি হিসেবে যেখানে এখনও রয়েছে রাজপ্রাসাদ, কাঁচারি বাড়ি, দোলমঞ্চসহ আরও অনেক নিদর্শন। রাজত্বকালে গড়ে তোলেন অস্ত্র তৈরির কামারশালা। প্রতœতাত্ত্বিক অধিদফতর রাজা সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদ এবং দোলমঞ্চটিতে সংস্কার কাজ চালালেও কালের বিবর্তনে রাজপ্রসাদ থেকে হারিয়ে গেছে ব্যবহৃত মূল্যবান অনেক কিছুই।
জানা গেছে, রাজা সীতারামের অস্ত্র ভা-ারের স্মৃতি হিসেবে কিছু তরোবারি মহম্মদপুর থানায় পুলিশের মালখানায় রয়ে গেছে। আর যে পালঙ্কটিতে রাজা বিশ্রাম নিতেন সেটি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল মাগুরা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে। নতুন ভবন নির্মাণ এবং সংস্কার কাজের সুবিধার জন্যে প্রতœতাত্ত্বিক এই নির্দশনটি ট্রেজারি থেকে কখনো রেকর্ডরুমের স্তুপে কখনো জিমখানার অন্যান্য অব্যবহৃত উপকরণের পাশে জায়গা পেয়েছে। সর্বশেষ অবস্থান ছিল ট্রেজারি রুমের পাশে রেকর্ড রুমে দলিল-দস্তাবেজের মধ্যে।
গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পালঙ্কটি সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ডিসির বাসভবনে। শুধু তাই নয় নতুন রঙ পালিশে চকচক করে স্থান দেয়া হয়েছে শয়নকক্ষে। ওই খাটে তিনি ঘুমান বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসনের নেজারত, ট্রেজারি এবং রেকর্ড রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২ ফেব্রুয়ারি পালঙ্কটি মাগুরার এনডিসি রাজিব চৌধুরীর সহায়তায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন রাজিব চৌধুরী। তিনি বলেন, সীতারামের একটি মূল্যবান পালঙ্কের কথা শুনেছি। কিন্তু এখন কোথায় কীভাবে আছে সেটি খুঁজে দেখতে হবে।
তবে পালঙ্কটি দীর্ঘদিন রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত ছিল বলে জানিয়েছেন এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইসাহাক আলি।
আবার বর্তমান কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, রেকর্ড রুমে থাকলেও এখন নেই। কিন্তু কেন নেই সেটিও জানা নেই।
বিষয়টি নিয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক আলি আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পালঙ্কে ঘুমানোর কথা অস্বীকার করলেও মিস্ত্রি ডেকে মেরামত ও রঙ করার কথা স্বীকার করেছেন।
তবে এ বিষয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা, আমাদের প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ঐতিহাসিক কোনো নির্দশন ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। আর স্থানীয়ভাবে এটি মেরামতের চেষ্টা করলে এর এন্টিকভ্যালু থাকবে না।
তিনি আরও জানান, গত বছর দেশের সকল জেলা প্রশাসককেই এসব নিদর্শনগুলো যাদুঘরে জমা করার জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কেন তারা সেটি করেননি তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সম্পাদক: রিমন রাজভর /নির্বাহী সম্পাদক:রেজুয়ান খান রিকন / নর্থ বেঙ্গল প্রাইভেট লি: / ১৩৫# কুঠিবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।
স্বত্ব ©২০১৭- ২০২৩ এনবি নিউজ একাত্তর