ঢাকাSunday , 8 April 2018
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যে কারণে খুন করা হয় কিশোরী বিউটিকে

Link Copied!

মোঃ সুমন আলী খাঁন, হবিগঞ্জ সংবাদদাতা: হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মনডোরা গ্রামের ৭ম শ্রেনির ছাত্রী কিশোরী বিউটি আক্তার হত্যার সাথে জড়িত তার বাবা ছাায়েদ আলী ও তার সহযোগী ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৬নং ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক ময়না মিয়া। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে কিশোরী বিউটিকে। গত শনিবার বিউটির পিতা ছায়েদ আলী এবং গত শুক্রবার ময়না মিয়া ১৬৪ ধারা আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে এ তথ্য দিয়েছে। ময়নার দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছোরাটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। মামলায় মুল অভিযুক্ত আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে সে বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। কিশোরী বিউটি আক্তারকে হত্যার সাথে জড়িতদের দেয়া স্বীকারোক্তি ও স্বাক্ষীদের দেয়া জবানবন্দির আলোকে গত শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের দেয়া প্রেস ব্রিফিয়ে পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা উপরোক্ত তথ্য প্রদান করেন। পুলিশ অফিস প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বলেন, কিশোরী বিউটিকে ধর্ষণের পর বাবুল মিয়া হত্যা করেছে মর্মে মহান স্বাধীনতার মাসে লাল-সমুজের পতাকায় বিউটির লাশ নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সৃষ্টি হয় আবেগ। এতে দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।

তিনি বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাবুলের মা কলম চান ওরপে আবুলী ও ময়নার স্ত্রী আসমা আক্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে আসমা পরাজিত হলে বাবুল ও তার মা আবুলীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুজতে থাকে ময়না।

এদিকে ব্রাহ্মনডোরা গ্রামের দিনমজুর ছায়েদ আলীর কন্যা মুজাহের হাই স্কুলের ৭ম শ্রেনির ছাত্রী বিউটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রাণ গ্রুপের সুপারভাইজার বখাটে বাবুল মিয়া। সে ইতিপূর্বে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করে। গত ২১ জানুয়ারি বাবুল মিয়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিউটিকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। অলিপুর এলাকায় স্কয়ার কোম্পানীর পাশে ১ হাজার টাকা মাসে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে। ১৭ দিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি বিউটি প্রাণ কোম্পানীতে কাজ করতে গেলে স্থানীয়রা তাকে দেখে ফেলে। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার সুচিউড়া গ্রামের জালাল মিয়ার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ঘন্টা অবস্থান করে বাবুলের সাথে বিউটিকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবুল রাজি না হওয়ায় সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন অসুস্থ অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিউটিকে। ৩দিন চিকিৎসার পর তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে আবারো বাবুলের সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য শালিসের মাধ্যমে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে থানায় না গিয়ে বিউটির বাবা ছায়েদ আলী ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ৪ মার্চ শায়েস্তাগঞ্জ থানায় রেকর্ড করা হয়। মামলা রেকর্ডের পর ভিকটিমের ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ডাকা হলেও তারা আসেনি। ১১ মার্চ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শালিসে বসলে বাবুল রাজি না হওয়ায় ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য ১২ মার্চ বিউটিকে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিনই তার ডাক্তারী পরীক্ষা করানো হয়। ওই দিন আদালতে ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে বিউটি জানায় তাকে অপহরণ করা হয়নি। সে স্বেচ্ছায় বাবুলের সাথে গিয়েছে। এখনও বাবুল তাকে বিয়ে করলে মামলা তুলে নেবে। কিন্তু বিউটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তার বক্তব্য আমলে নেয়া হয়নি। পরে ১৬মার্চ বিউটিকে তার নানীর বাড়ি লাখাই উপজেলার গুনিপুর পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে ২১ জানুয়ারী বিউটি নিখোজের পর থেকে তার পিতা ছায়েদ আলীর ঘনিষ্ট সহচর ব্রাহ্মনডোরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ময়না মিয়া নড়েচড়ে উঠে। সে তার স্ত্রীর নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বাবুল ও তার মা আবুলীকে ফাঁসাতে ছায়েদকে প্ররোচিত করতে থাকে। সে ছায়েদ আলীকে বুঝাতে থাকে তার বিউটিকে বাবুল নষ্ট করে ফেলেছে। এখন বিয়ে করছে না। তার অপর দু’কন্যা সোনিয়া আক্তার (৯) ও তমা (৬)কে ভবিষ্যতে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে। বিউটিকেও বিয়ে দেয়া যাবে না। এবং বিউটি জ্বীন-পরীর ধরা তাই বার বার নিখোজ হয়। এ কথা বার বার বলে বিউটিকে মেরে ফেলে বাবুল ও তার মাকে ফাসিয়ে শায়েস্তা করার পরামর্শ দেয় ময়না মিয়া। এক পর্যায়ে ছায়েদ আলী রাজি হয়ে যায়। এ সুযোগকেই কাজে লাগায় ময়না মিয়া। সে অনুযায়ী গত ১৬মার্চ রাত ১০টার দিকে ব্রাহ্মনডোরা বটগাছের নীচে যায় ছায়েদ ও ময়না। সেখানে ওই এলাকার চিহ্নিত কুখ্যাত চোর ও ডাকাত হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তিকে ময়না কিলার হিসেবে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া করে নিয়ে আসে। এ সময় ময়না ওই কিলারকে ২ হাজার ৫শ টাকা পরিশোধও করে। বাকি টাকা হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার পর পরিশোধ করা হবে বলে জানায়। সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখান থেকে রাত আনুমান ১০টার দিকে রওয়ানা দিয়ে ছায়েদ আলী, ময়না ও বাড়াটে খুনি লাখাই উপজেলা গুণিপুর গ্রামে বিউটির নানার বাড়ি পৌঁছান রাত সাড়ে ১২ টার দিকে। এ সময় ছায়েদ কথা বলার জন্য মেয়ে বিউটিকে চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যেতে এসে বলে বিউটির নানী ফাতেমা বেগমকে জানান। প্রথমে তিনি রাজি না হলেও পরে বিউটিকে তার বাবার সাথে যাবার অনুমোতি দেন। পরে তারা বিউটিকে নিয়ে গুণিপুর গ্রাম থেকে রওয়ানা দেয়। রাত অনুমান আড়াইটার দিকে এরা হরিণাকোণা এলাকায় পৌছার পর ময়না কথা বলার জন্য বিউটিকে রাস্তার পাশে খালের পাড়ে নিয়ে যায়। ছায়েদ আলী তখন একটু দুরে দাড়িয়ে ছিল। সেখানে ভাড়াটে কুখ্যাত ডাকাত বিউটির হাত-পা ছেপে ধরে রাখে। আর ময়না মিয়া তার সঙ্গে থাকা ১৪ ইঞ্চি লম্বা একটি ছুরি দিয়ে একে একে ৫টি আঘাত করে। এতে বিউটির নাড়িভুরি বের হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। হত্যার পর সেখানে খালের পানিতে রক্ত ধুয়ে মুছে রাতেই হত্যাকান্ডের স্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে ব্রাহ্মনডোরা পূর্ব গ্রামের হাওরে লাশ ফেলে এরা চলে যায়। পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন সবুজ ঘাসের উপর লাশ জামা-স্যালোয়ার পরিহিত বিউটির লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় আশপাশের কোথাও রক্তের দাগ না পেয়ে সন্দেহ করি যে, অন্যত্র কোথাও হত্যা করে লাশ এখানে ফেলা হয়েছে। এদিকে বিউটি হত্যার খবর পেয়ে তার নানী ফাতেমা খাতুন ছুটে আসলে ছায়েদ ও ময়না থাকে এ বিষয়ে কথা বলতে বারণ করে। এতে তিনি ঘটনার ব্যপারে মুখ খুলেন নি।

১৮ মার্চ বিউটির বাবা বাদী হয়ে বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবি আবুলী (৫০)কে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পর থেকে পুলিশ বাবুল ও আবুলীকে খুজতে থাকে। এরই মাঝে বাবুল র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ে। বাবুলের মাকেও আমরা গ্রেফতার করি। পরে বাবুল ও তার মাকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

পুলিশ সুপার বলেন, এদিকে লাশ পাবার সেখানে উপস্থিত বিউটির মা-বাবার চেহারায় সন্তান মারা যাবার আকুতি লক্ষ্য করা যায়নি। আমরা সে বিষয়টি মাথায় রেখে তাদেরকেও ওয়াছে রেখেছি। এবং ঘটনার পর মামলা দায়ের থেকে শুরু করে সবকটি কর্মকান্ডে ছায়েদ আলীর পাশে ময়নাকে দেখতে পেয়ে তার গতিবিধিও আমরা লক্ষ্য রাখি। এক পর্যায়ে আমরা কথা বলার জন্য বিউটির নানী ফাতেমা বেগমকে নিয়ে আসি। কথা বলার এক পর্যায়ে বিউটির নানী তখন পুরো ঘটনা আমাদেরকে বলেন। এর প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ময়নাকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় ময়না পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। ময়না গত শুক্রবার রাতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেয়। শুক্রবারই বিউটির বাবা ছায়েদ আলীকে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ছায়েদ আলীও পুরো ঘটনা অকপটে স্বীকারে করে। গতকাল বিকেলে ছায়েদও ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। ছায়েদ এখন বুঝতে পেরেছে। সে এখন মেয়ে হত্যার জন্য অনুসুচনা করছে। অপর দিকে বাবুল মিয়া আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে বিউটিকে ১৭দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া বিউটির নানী ফাতেমা বেগম ও ময়নার স্ত্রী আছমা আক্তার স্বাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। আছমা জানিয়েছে, ঘটনার সময় সে পিত্রালয়ে ছিল। ঘটনার পর এলাকায় এসে এ হত্যার সাথে তার স্বামী ময়নার সম্পৃক্ততার কথা এলাকায় শুনে ময়নাকে জিজ্ঞেস করে। এ সময় ময়না অস্বীকার করে। পরে তার সন্তানের কসম খেয়ে বলার জন্য বললে ময়না হত্যার কথা স্বীকার করে। ফলে হত্যার ঘটনাটি পুরোপুরি উদঘাটিত হয়েছে। তিনি বলেন, ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

শুক্রবার ময়না মিয়া ও বাবুল মিয়া এবং শনিবার বিউটির বাবা ছায়েদ আলী হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। এবং স্বাক্ষী হিসেবে শুক্রবার বিউটির নানী ফাতেমা বেগম ও শনিবার ময়নার স্ত্রী আছমা আক্তার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।