জেএম.মমিন,ভোলাঃ বাংলাদেশের দ্বীপের রাণী বলা হয় ভোলা’কে ৷ আর এখানে রয়েছে নানা রকমের সম্পদ ৷ তার মধ্যে সাগর ও বিভিন্ন নদ-নদীর মাছ অন্যতম ৷ সেই মাছকে বাজার-জাত করা হচ্ছে বিভিন্ন উপায়ে ৷ তার মাঝে শুটকি করে বিক্রি করা একটি পন্থা ৷
আর এই ভোলায় উৎপাদিত শুটকি এখন বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তারি করা হচ্ছে।
ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস শুটকি। তারা বর্ষার ৬ মাস নদী ও সাগরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করে রোদে শুকাতে থাকে। পরের ৬ মাস তারা এসব শুটকি বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে। আর এ পেশায় নিয়োজিত থেকে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে ৷
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন নদী ও সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করে ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট, ফকিরহাট, তালতলি, কলাতলি, চরফ্যাশন উপজেলার কুকরী-মুকরী, মনুরা, বকশি, ঢালচর, চর পাতিলায় বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য শুটকি পল্লী গড়ে উঠেছে।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পুরুষ ও নারীরা খোলা আকাশের নিচে মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি প্রস্তুত করছে। ওই সব শুটকি বাজারে বিক্রি করা হয়।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরী-মুকরী শুটকি ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল হোসেন জানান, কার্তিক থেকে চৈত্র মাস শুটকির মূল মৌসুম। আমাদের থেকে শুটকি নিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন।
ঢালচরের শুটকি ব্যবসায়ী আবদুল হালিম জানান, ‘ভালো মানের শুটকি উৎপাদন করায় আমাদের শুটকির অনেক চাহিদা। চট্টগ্রামে পাইকারি বিক্রি করি।
এছাড়াও আমরা ঢাকা আড়ৎদারের মাধ্যমে বিদেশে শুটকি রপ্তানি করি। শুটকি বিক্রি করে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। এখন আমার শুটকি পল্লীতে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছে।’
দুলারহাটের শুটকি আড়ৎদার মিজানুর রহমান জানান, প্রতি মণ ওলুপা শুটকি দুই হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, সেওলা ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকা, রাবিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা ও চিংড়ি গুঁড়া ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। শুটকি মাছের মান ভেদে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের শুটকি বিদেশে ভালো দামে বিক্রি করা হয়।
ঢাকার শুটকি পাইকারি আড়ৎদার মো. আবু সালাম মিয়া জানান, ‘ভোলায় ভাল মানের শুটকি উৎপন্ন হয়। তাই সেখানকার শুটকির দাম একটু বেশি। ভোলার শুটকির চাহিদা বিদেশে রয়েছে। তাই আমাদের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশে শুটকি রপ্তানি করে।’
এ ব্যাপারে ভোলা জেলা মৎস্য অফিসার মো. রেজাউল করিম জানান,ভোলায় অনেক শুটকি পল্লী গড়ে উঠেছে। অনেক পরিবার দেশ ও বিদেশে শুটকি রপ্তানি করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা শুটকি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।