স্টাফ রিপোর্টার: হত্যাকারীদের পরিকল্পনা ছিল একজনকে হত্যা করার। সেই অনুযায়ী ডেকে নেওয়া হয় ওই ব্যক্তিকে। কিন্তু ওই ব্যক্তি বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ায় খুনের শিকার হতে হয় বন্ধুকেও। আর এ দুজনকে হত্যার দৃশ্য দেখা ফেলায় খুন হতে হয় আরও দুজনকে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় চারজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য ভেদ করে এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
মাদক ব্যবসায় বিরোধের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা।
আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে জাকারিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বাকি তিনজন ঘটনার শিকার হয়েছেন। চার খুনের ঘটনায় নয়জন জড়িত ছিলেন। এঁদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁরা হলেন জুয়েল শেখ (২৫), আবুল কালাম আজাদ (৪৮) ও রুবেল (৩০)।
৭ মে সকালে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দাবুইর মাঠে ধানখেতে হাত বাঁধা অবস্থায় গলাকাটা চার লাশ উদ্ধার হয়। পরে স্বজনেরা এসব লাশ শনাক্ত করেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার চার ব্যক্তি হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার কাঠগাড়া পূর্বপাড়ার শাহাবুল ইসলাম ও জাকারিয়া এবং জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট পাঁচপাইকা গ্রামের হেলাল উদ্দিন ও একই উপজেলার নান্দাইলদীঘি (লখইর) গ্রামের খবির উদ্দিন।
পরে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। গতকাল রোববার রাতে আবুল কালাম আজাদ ও রুবেলকে এবং আজ ভোরে জুয়েলকে যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও জেলা পুলিশ।
লাশ উদ্ধারের আগের দিন ৬ মে রাতে এই চারজনকে হত্যা করা হয় বলে জানান এসপি আলী আশরাফ ভূঞা। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা পেশায় মাদক ব্যবসায়ী। আর যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁরাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁরা ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন করতেন। তাঁদের মধ্যে জাকারিয়ার কাছে ছয় হাজার টাকা পেতেন হত্যাকারীদের মধ্যে একজন। এর জের ধরে ঘটনার তিন দিন আগে জাকারিয়ার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর পরপরই জাকারিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ মে রাত ১১টার দিকে রুবেল তাঁর দাবুইরের বাড়িতে মাদকসেবনের কথা বলে জাকারিয়াকে আসতে বলেন। জাকারিয়া তাঁর বন্ধু শাহাবুলকে নিয়ে রুবেলের বাড়ি যান। সেখান থেকে রাত ১১টার দিকে রুবেল, জাকারিয়া, শাহাবুলসহ অন্যরা দাবুইর মাঠে যান। সেখানে মাদকসেবনের একপর্যায়ে জাকারিয়া ও শাহাবুলকে গলা কেটে হত্যা করেন জুয়েল শেখ।
জাকারিয়া ও শাহাবুলকে হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলায় হেলাল উদ্দিন ও খবির উদ্দিনকে হত্যা করা হয় বলে জানান এসপি আলী আশরাফ ভূঞা। তিনি বলেন, জাকারিয়া ও শাহাবুলকে হত্যার সময় দাবুইর মাঠ এলাকা দিয়ে মাদকের চালান নিয়ে রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছিলেন হেলাল উদ্দিন ও খবির উদ্দিন। এই দুজনকে হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলেন তাঁরা। এরপর হেলাল ও খবিরকে ধরে গলা কেটে হত্যা করা হয়।