ভুলে গেছো একাত্তরের নয় মাস? রক্তগঙ্গার স্রোত বেয়ে নির্ধারণ করতে হয়েছে মানচিত্রের সীমারেখা, পেয়েছি একটা নাম- লাল সবুজের একটা পতাকা। মন ভরে মুক্ত বায়ুতে নি:শ্বাস নেয়া, অবিচার আর দু:শাসনের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পেতেই স্বাধীনতার সেই সাধ ছিল। সাধ্যের বাইরের সেই স্বপ্ন ধরা দিলেও ২০১৯ এ এসে কতটুকু আসলে তৃপ্ত তুমি প্রিয় বাংলাদেশ?
তোমার রাজধানীর দিকে তাকাও একবার! ইটের পর ইট আর সেই ইটের চারপাশে অসংখ্য কীট কিলবিল করছে। সেইসব কীটের সঙ্গে প্রতিদিন বাঁচার লড়াই করে টিকে আছে কথিত সর্বময় ক্ষমতার উৎস নিষ্পেষিত জনগণ। এই শহরে রাস্তায় নামতে হয় মৃত্যু পরোয়ানা হাতে নিয়ে। রাস্তা ঘাট যেমন বেহাল তেমনি রাস্তা জুড়ে শত শত দানব যন্ত্রযান। আমার মতো লাখ লাখ আম জনতার ঠাঁই কই? ইটের পর ইট জুড়ে দিয়ে পরিকল্পনা ছাড়াই বেড়ে ওঠেছে ভবন। সেই ভবনগুলো একেকটি মৃত্যু ফাঁদ। স্রষ্টা প্রদত্ত দুর্যোগ এড়ানোর উপায় আমাদের নেই, তাই বলে ছোটো খাটো দুর্ঘটনাগুলো মোকাবেলা করার মতো সাবালকত্বও তোমার আসেনি প্রিয় বাংলাদেশ?
গণতন্ত্রের ধোঁয়ায় গণমানুষ দগ্ধ হচ্ছে প্রতিদিন। যে সকল অধিকার মানুষের জন্মগত অর্থাৎ মানুষ জন্মের পর যে সব অধিকার পাবে তাকে বলে মৌলিক অধিকার। আমাদের প্রধান মৌলিক অধিকার ৫টি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। এদেশে অনাহারী মানুষের সংখ্যা কতো জানো? বস্ত্রের অভাবী মানুষের সংখ্যা? ঘরদোরহীন ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যাটা একবার ভাবোতো! শিক্ষার হার বাড়ছে (!), কিন্তু প্রাথমিকের শিক্ষাও মিলছে না লাখ লাখ শিশুর। আবার যে শিক্ষা পাচ্ছি প্রশ্ন ফাঁসসহ বহু প্রশ্নে জর্জরিত। আর চিকিৎসা? সরকারী হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে বলার কিছু নেই। বেসরকারী হাসপাতালগুলো টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। ডাক্তারেরা একেকজন অ্যাপ্রোন পড়া উত্তরাধুনিক কসাই। মৌলিক অধিকার পাঁচটির দিকে আরেকবার তাকাও বাংলাদেশ। এরপর একটু নিজের দিকে। তোমার কী খুব লজ্জা হচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ?
উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে আমরা বিষম এগিয়ে গেছি। মহাকাশে স্যাটেলাইট, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু, লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় ভরণ-পোষণ আরো কত কী! তোমার রাজধানীর বুকে কত কত ২০ তলা ৩০ তলা ভবন। অথচ দেখো ফায়ার সার্ভিসের মই দশ তলার পর আর ওঠতে পারে না। ১৭ টি ইউনিট মিলেও পাঁচ-ছয় ঘন্টায় একটা ভবনের আগুন নেভাতে পারে না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জান দিয়ে চেষ্টা করেন সত্য, কিন্তু প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতা ছাড়া কতটুকুই বা সফল হওয়া যায়? ভবনগুলোতে অগ্নি নিরাপক ব্যবস্থা, ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থার বালাই নেই। এতোটুকু আধুনিকায়নের জন্য কতটা সদিচ্ছা আর কী পরিমাণ টাকা লাগতে পারে প্রিয় বাংলাদেশ?
এই যে এতো কথা বলছি-লিখছি, বিশ্বাস করো বাংলাদেশ তোমার প্রতি এতোটুকু ঘেন্না নেই। কিন্তু নিজের প্রতিই কেমন যেন ঘেন্না ধরে যায়। সভ্যতার মিছিলে আমিও একজন। কী রেখে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। কোথায় নিরাপদে উড়বে লাল সবুজের পতাকা? হাত থেমে আসছে..
ভালো থেকো প্রিয় বাংলাদেশ।
আর যদি পারো, আমাদের ভালো রেখো!
ইতি
তোমার হতভাগা নাগরিক
রণক ইকরাম