বিশেষ প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল ফিতর’র মাত্র ক’দিন বাকি। ঈদ উৎসবে প্রিয়জনের জন্য কেনাকাটা করতে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মার্কেটে ছুটছেন ক্রেতারা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে দোকানদার ও কর্মচারীদের ব্যস্ততা বাড়ছে। ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের হাতে পছন্দের পোশাক তুলে দিতে দোকানিরা সব রকমের আয়োজন সম্পন্ন করছেন। রংপুর মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিলন পোশাক আশাকের দাম সহনীয় এবং আইন শৃঙ্খলার সার্বক্ষনিক নজরদারি থাকায় ক্রেতারা নিরাপদে কেনাকাটা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই গত বছরের চেয়ে এবার ব্যবসা ভাল হবে বলে জানান। আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, সারধারন মানুষ যেন নিরাপদে ঈদ উৎসবরের কেনাকাটা করতে পারে সে জন্য গোটা রংপুর কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পোশাক ও সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা অবস্থান করছেন। রংপুর শহরের বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে গভীর রাত অবধি চলছে বেচাকেনা। নজরকাড়া ডিজাইন ও রকমারী পোষাকে মার্কেটগুলোর দোকানপাট ঝলমল করছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা আর ভীড় বাড়ছে ক্রেতাদের। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। জনসাধারণের ভিড়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে দোকানিদের। রংপুর বিভাগ ও সিটি করপোরেশন হওয়ার পর লোকজনের ভীড় ও বিক্রি আরও বেড়ে গেছে। রংপুরের পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং গাইবান্ধাসহ জেলার ৮ উপজেলার মানুষ নতুন ডিজাইনের ভাল পোষাক কেনার আশায় ছুটে আসছেন রংপুর শহরে।
ঈদকে ঘিরে রংপুর শহরের সুপার মার্কেট, জাহাজ কোম্পানী শপিং কমপেক্স, জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেট, রাজা রামমোহান ক্লাব মার্কেট, গোল্ডেন টাওয়ার মার্কেট, মোস্তফা সুপার মার্কেট, মতিপ্লাজা, সিটি মতিপ্লাজা, ছালেক ও জামাল মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে ব্যাপক আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এছাড়া সেন্ট্রাল রোড, জি এল রায় রোড, হনুমান তলাসহ ফুটপাতের মার্কেটগুলো চোখে পরার মত ভীড় লক্ষ করা গেছে। এবারও ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে দেশে তৈরি পোশাকের চেয়ে ভারতীয় সিরিয়ালের পোশাকগুলো। এ বছর শাড়ীর মধ্যে গাউন, পাখি, লেহেঙ্গা, কাতান, জামদানি টিস্যু, তাঁত, সুতি, জর্জেটসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের ৭০০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে মেয়েদের পোশাকের মধ্যে রয়েছে জিপসি, ফ্রক, কোটি, ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি পিস, শর্ট টপস, লেডিস প্লাজো, ফ্লোর টাচ, ছোট পাখি, জেগিন্স ইত্যাদি বাহারি নামে। এসব পোশাক ১ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতাদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করতে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রজাপতি, রাখি, ডালি ব্যান্ড, গাউন, ফ্রক বিক্রয় হচ্ছে। পাকিস্তানী লোন ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, এবং দেশি থ্রী পিস ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ছোট মেয়েদের সাহারা, টপস, ছোট পাখি, পার্টি ফ্রক, স্কার্ট, ডিভাইডার ও জিপসি ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উৎসবে বাহারী জুতা সেন্ডেল কিনতে দোকান ও শো-রুমগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। জাহাজ কোম্পানির মোড়ের বুবলী বুট হাউজের ম্যানেজার রবিউল জানান, থাইল্যান্ড ও চায়নার তৈরি জুতা সেন্ডেল বেশী পছন্দ করছেন ক্রেতারা। এবার বিভিন্ন ব্যান্ডের ২৫০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পযর্ন্ত দামের জুতা সেন্ডেল রয়েছে। ছেলেদের পোশাকের মধ্যে প্যান্ট চলছে কলকাতা নাইট রাইডার্স, পিকে, ব্যাং-ব্যাং, হিমেশ, রোমিও, বিকিং, বেন্সন, প্রেমা, ডিসকভারী এসব নামে। এছাড়াও গেঞ্জির মধ্যে রয়েছে কেএনজি, গিফিনি, জিকিউ, সিকেসহ অন্যান্য ফ্যাশনেবল গেঞ্জি ও বাহারি ডিজাইনের সব পাঞ্জাবী। ছেলেদের কার্গো জিন্স, থাই, ডিসকার্ড-২, স্লিম ফিট, ফরমাল টি শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। ছোটদের লেহেঙ্গা, সিঙ্গেল টপ, টপ সেট, গেঞ্জি সেট ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এছাড়াও ছেলেদের শর্ট পাঞ্জাবী, লং পাঞ্জাবী, শার্ট, জুতা, ফতুয়া জিন্সসহ শিশুদের নানা বৈচিত্রের দেশিয় পাঞ্জাবী ৩৫০ থেকে ৫ হাজার টাকা এবং আকর্ষনীয় শেরওয়ানী ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দোকানীরা দাম হাকছে। কসমেটিকস দোকানগুলোতে মেয়েদের ভারতীয় এমিটেশনের তৈরি গহনার প্রতি আগ্রহ বেশী দেখা যাচ্ছে।
এসব মালা, নেকলেছ, কানের দুল, টপ, পাশা, আংটি, রুলি বালাসহ অনান্য গহনা প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রংপুর সুপার মার্কেটে বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষার্থী লুবনা আক্তার ও তার বন্ধু পারভেজ পছেন্দের পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস কিনেছেন ৯ হাজার টাকায়। তারা জানান, দোকান গুলোতে দেশীও পোশাকের চেয়ে ভারতীয় মানহীন চাকচিক্য পোশাক বেশী। ওই মার্কেটের দোকানদার বাবু মিয়া বলেন, ক্রেতাদের দৃষ্টিঅনুযায়ী পোশাক তুলতে হয় আমরাও জানি দেশীও তৈরি পোশাক মান সম্পন্ন কিন্তু কি করার আছে আমাদের দেশের ক্রেতারা ভারতীয় সিরিয়াল দেখে পোশাকের নাম নির্ধারন করে। জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপেক্সে কেনাকাটা করতে এসেছেন সাতমাথা থেকে রাবেয়া আলম তিনি স্বামী, শ্বাশুড়ি, ছেলে ও মেয়ের জন্য ঈদের পোষাক কিনেছেন ২০ হাজার টাকায়। তার জন্য কিছুই কিনেননি টাকা না থাকায়। যে বাজেট নিয়ে তিনি এসেছিলেন মার্কেটে তার চেয়ে অনেক বেশি লেগেছে বলে তিনি জানান। এবার গত বছরের চেয়ে কাপড়ের দাম একটু বেশী মনে হচ্ছে। এদিকে নি¤œ আয়ের মানুষদের মার্কেট বলে পরিচিত ছালেক ও জামাল মার্কেট। ওই মার্কেটে কাউনিয়া থেকে এসেছেন কৃষক সোলেমান তার ছেলের স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা অল্প আয়ের মানুষ এ টা গরিবের মার্কেট এখানে দাম একটু কম তাই ছেলের শার্ট, প্যান্ট, মেয়ের জন্য থ্রি-পিস বউমার জন্য শাড়ী কিনেছি। টাকার অভাবে স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি কিনতে পারেননি।
সম্পাদক: রিমন রাজভর /নির্বাহী সম্পাদক:রেজুয়ান খান রিকন / নর্থ বেঙ্গল প্রাইভেট লি: / ১৩৫# কুঠিবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা।
স্বত্ব ©২০১৭- ২০২৩ এনবি নিউজ একাত্তর