ঢাকাFriday , 7 June 2019
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সম্প্রতি দেশে সাদা রঙয়ের ইয়াবা: ইয়াবামুক্ত হতে মিয়ানমারের ভূমিকা বিশেষভাবে দায়ি!!

Link Copied!

উজ্জ্বল রায়■ মিয়ানমারে কোন ইয়াবা কারখানা নেই বলে দাবি করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ করে মিয়ানমার থেকে এটি একটি সাধারণ ধারণা। মিয়ানমার সংলগ্ন টেকনাফ ও ককসবাজারকে ইয়াবা প্রবেশের রুট বলেও ধারণা করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার ড্রাগ ল্যান্ড বলে পরিচিত মিয়ানমার।
লাওসের উত্তরাঞ্চল, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের কিয়দংশ মিলেই ইয়াবা। আফিম ও হেরোইন বাণিজ্যে এক সময় কুখ্যাত ছিলো এ অঞ্চলটি। পৃথিবীতে আফিমের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি জোগান আসতো এই অঞ্চল থেকে। জাতিসংঘের ইয়াবা ও অপরাধ বিষয়ক অফিসের (ইউএনওডিসি) তথ্যমতে, ১৯৯৩ সালে মিয়ানমার একাই উৎপাদন করেছিলো ১৮০০ মেট্রিক টন আফিম। এর এক দশক পর তিনটি দেশই (লাওস, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার) ইয়াবা নিধন কর্মসূচি গ্রহণ করায় ফল এসেছিলো হাতেনাতে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে বছরে আফিম উৎপাদন নেমে এসেছিলো ৩৫০ মেট্রিক টনে। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে ব্যাপক নজরদারির কারণেই দারুণ লাভজনক পপি চাষের বিস্তার ঘটেছিলো আফগানিস্তান ও কলম্বিয়ায়। এই দুটি দেশে শুরুতে ঝুঁকি বলতে কিছুই ছিলো না।
সম্প্রতি দেশে সাদা রঙয়ের ইয়াবা পাওয়া গেছে বলেও সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি মিয়ানমার টাইমস প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনি শ্যান স্টেইটে ৩ কোটি ইয়াবা বড়ি জব্দ করেছে। মিয়ানমারে ইয়াবা উৎপাদন না হলে কিভাবে এত বড়ি জব্দ হয়েছে এটি প্রশ্ন থেকে যায়। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জব্দ ইয়াবার পরিমাণ ছিল ৯ কোটি ৮০ লাখ বড়ি।
সোনার বিনিময়ে আফিম কেনা হতো বলেই সম্ভবত নাম দেয়া হয়েছিলো। মাঝে ধারণা জন্মেছিলো এ অঞ্চলের কদর বুঝি কমে গেছে: কিন্তু বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। আফিমজাত পণ্যের বহুমুখিকরণের মাধ্যমে অঞ্চলটি এখন আগের চেয়ে এখন ভালো অবস্থানে (ইয়াবা কেনা-বেচার প্রশ্নে)। আফিম ও হেরাইনের মতো পুরনো আইটেম তো রয়েছেই, সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পপি গাছ থেকে উৎপাদিত নিত্যনতুন মাদক। তবে পাল্টে গেছে পাচারের রুট। আগে দক্ষিণে থাইল্যান্ড হয়ে ইয়াবা মাদক পৌঁছতো অন্যান্য দেশে। আর এখন প্রথমে যায় উত্তরে, চীনে। তারপর ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। ইউএনওডিসি’র তথ্যানুসারে ২০১২ সালে চীনের ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ইয়াবাসেবী ব্যবহার করেছিলো ৫০ মেট্রিক টন বার্মিজ হেরাইন। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলে পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে পুনর্জাগরণ ঘটে ১৯৯০’র দশকের শেষদিকে। ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুত করার পর মাদক ব্যবসায়ীরা বাজারে ছাড়তে শুরু করে মেথামফেটামিন ট্যাবলেট। উচ্চ আসক্তি সৃষ্টিকারী এই মাদকের থাই নাম ইয়াবা (ক্রেজি মেডিসিন)। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে দুই ডিজিটের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে এর জনপ্রিয়তা। কম পরিবহন খরচকে কাজে লাগিয়ে নতুন ভোক্তাদের সহজেই আকৃষ্ট করে ফেলে এই ইয়াবা। শুরুতে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে টার্গেট করলেও পরবর্তীতে সব শ্রেণিকেই ছোবল দেয় এটি।
ইয়াবা সেবীদের কাছে মেথামফেটামিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। এটি খাওয়া ছাড়াও নাকে কিংবা মুখে টানা যায়। প্রয়োজনে ইনজেক্টও করা যায়। ব্যবহার করলে প্রাথমিকভাবে শক্তি, আত্ম-শ্রদ্ধা ও যৌন আনন্দ বৃদ্ধি করে। কিন্তু এর শেষ পরিণতি ভয়াবহ। মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। উচ্চ আসক্তিমূলক বলে হঠাত্ ছেড়ে দিলে দীর্ঘমেয়াদী বিষণ্নতা ছাড়াও নানারকম জটিলতা দেখা দেয়। তা সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না এর বিস্তার। সহজসাধ্য বলে অনেক দেশে দিনমজুরও কাজের ফাঁকে সেবন করে নিচ্ছে ইয়াবা: মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা তো রয়েছেই।
ইয়াবা প্রস্তুত হয় নির্দিষ্ট ভোক্তাদের টার্গেট করে। অপিয়াম পপির বোটানিক্যাল নাম এর বড় প্রমাণ। আয়েশি বৃদ্ধ লোক এবং পশ্চাদপদ পাহাড়ি উপজাতিদের জন্যই মূলত আফিম প্রস্তুত করা হতো। হেরোইনের লক্ষ্য ছিলো— যাদের হারানোর কিছুই নেই। কিন্তু ইয়াবার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। বিশেষত তরুণ এশীয়রা এটিকে লুফে নিয়েছে। এটিই যতো ভয়ের কারণ। তরুণরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লে ভবিষ্যতে দেশ চালাবে কে? দেরিতে হলেও অনেক দেশই তা বুঝতে পেরেছে; কিন্তু হাজারো চেষ্টা সত্ত্বেও ওই পথ থেকে তাদেরকে ফেরাতে পারছে না।
ফের আগের অবস্থান দখল করেছে। টানা ছয় বছর অধোগতির পর ২০০৭ সাল থেকে মিয়ানমারে আবার বাড়তে শুরু করে পপি চাষ। দেশটিতে গেলো বছর উত্পাদিত হয় ৫৮০ মেট্রিক টন আফিম। যা কি না আগের বছরের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি। চাষ বাড়ছে লাওস ও থাইল্যান্ডেও। ইউএনওডিসি’র পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিনিধি সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, ‘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাদক উত্পাদন এবং এর পাচারের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখছে।’ তবে অনেকে বলছেন, এটি কথার কথা; এ অঞ্চলে মাদক উৎপাদন বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ।
তিন দেশের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে মেকং নদী। যার দৈর্ঘ্য ১৯৩ কিলোমিটার। মিয়ানমার-লাওস সীমান্তে দায়িত্বরত লাওস বর্ডার প্যাট্রল পুলিশের লেফটেন্যান্ট উইচাই চাম্পাতুন মনে করেন, ইয়াবা পাচার ঠেকানোর কাজে আরো কমপক্ষে পাঁচগুণ বেশি পুলিশ নিয়োগ করা প্রয়োজন। নদীর উভয় পাশের অধিকাংশ লোকই মাদক জাতীয় পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জেলে, কাঠুরিয়া এমনকি মুদি দোকানদারেরও গোপন অভিসন্ধি থাকে। কে কোন্ উদ্দেশ্য নিয়ে ঘোরাঘুরি করে তা বোঝা খুব মুশকিল। শুকনো মওসুমে তারা হেঁটে পার হয়ে যায় মেকং নদী। লাওস হয়ে থাইল্যান্ডের ভেতরে ঢুকতে পারলেই পাচারকারীরা পেয়ে যায় নিরাপদ রুটের সন্ধান। সেখানকার নগর ও শহরগুলোতে মিয়ানমারে উত্পাদিত ইয়াবার রয়েছে বিশেষ চাহিদা। প্রয়োজনে একটু বেশি দাম দিয়ে কিনতেও তারা কার্পণ্য করে না। মিয়ানমার থেকে সরাসরি বাংলাদেশেও ইয়াবা ঢুকছে ব্যাপক হারে। মেকংয়ের মতোই এক্ষেত্রে সহায়তা করে নাফ নদী।
১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের এক বিশেষ সেশনে থাইল্যান্ড, লাওস ও মিয়ানমার প্রতিনিধিরা ২০১৫ সালের মধ্যে তাদের অঞ্চলকে ইয়াবা মুক্ত করে অপবাদ মুছে ফেলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। এরই মধ্যে ১৪ বছর কেটে গেছে। টার্গেট পূর্ণ করার জন্য হাতে সময় আছে খুবই কম। বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই অঞ্চলে আফিমজাত পণ্যের ব্যবসা কখনোই বন্ধ হবে না। উপরন্তু গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল ফিরে পেয়েছে তার আগের রূপ। ব্যবসার প্রধান উপকরণ এখন ইয়াবা ট্যাবলেট।
জাতিসংঘের ড্রাগ ও ক্রাইম কর্তৃপক্ষ (ইউএনওডিসি) এর হিসাবে মিয়ানমারের কাচিন ও শ্যান স্টেইটে আফিম উৎপাদনে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ ৪১ হাজার হেক্টর (২০১৭)। মিয়ানমারের ইয়াবার রুট চিন অভিমুখে। বাংলাদেশ ভিকটিমে পরিণত হয়েছে ইয়াবার কারণে। দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী মাদকের শিকার হয়েছে। এটি ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ।
বাংলাদেশের মানুষ ইয়াবা মুক্ত হতে মিয়ানমারের ভূমিকা বিশেষভাবে দায়ি। মিয়ানমারের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল যদি জিরোতে চলে আসে, তাহলে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশ জিরো হতে পারে। মিয়ানমার যেহেতু বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মিলে মাদকের এই ছড়াছড়িতে জড়িত সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের উন্নত নৈতিকতা, মাদকের ছোবল থেকে মুক্ত থাকার ইচ্ছা পোষন ও বাস্তবায়ন জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনির ভূমিকা হতে পারে মূখ্য।
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে নবম দশম শেণির বাংলা গল্পে ইয়াবা ‘হেরোইন’ নামে একটি গল্প প্রচলন হয়েছিল। এটির লেখক ছিল ড. আবুল কালাম মনজুর মোর্শেদ। গল্পের মূল উপজীব্য ছিল হেরোইনের গ্রাস বোঝানো। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবার গ্রাস ও বিগ্রহ নিয়ে একই রকম গল্প থাকা জরুরি। তথ্য সূত্র: বার্মা জাতিগত সংঘাতের সাত দশক, আলতাফ পারভেজ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য কণিকা।

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।