মোঃহাফিজুর রহমান , মোংলাঃ
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মংলায় নির্মিত হবে দেশের প্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পার্শবর্তী দেশ ভারত সরকার মংলা পোর্ট পৌরসভাকে ১৫০ কোটি টাকা সহায়তা দিচ্ছে। রবিবার দুপুরে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে মংলা পৌরসভার সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ভারতের প্রিমিয়ার সোলার পাওয়ারটেক প্রাইভেট লিমিটেড ও বাংলাদেশের সোলার ইপিসি ডেভলপমেন্ট লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। যা দুই দেশের মধ্যে আরো একটি সেতু বন্ধন তৈরী করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
দেশের বনজ সম্পদ রক্ষাথে সুন্দরবন সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে দেশের প্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তাই দেশের প্রথম ভাসমান সোলার প্যানেল (সৌর বিদ্যুৎ) উৎপাদন কেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সহকারী হাই কমিশন রাজেশ কুমার রায়না। মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ জুলফিকার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যেও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন, নবায়ন যোগ্য জালানী ব্যবহার ও উন্নয়ন কর্তৃক্ষের পরিচালক যুগ্ম সচিব শেখ রিয়াজ আহম্মেদ, ভারতের প্রিমিয়ার সোলার পাওয়ারটেক প্রাইভেট লিঃ এর প্রধান নির্বাহী সুধীর মোলা ও বাংলাদেশের সোলার ইপিসি ডেভলপমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইজাজ আল কুদরত এ মজিদসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, ভারত আমাদের পাশবর্তী দেশ, এদেশ আমাদের স্বাধীনতার সময় অনেক বন্ধুরমতো পাশে এসে দাড়িয়েছে। এ বিপদের সময় তখন ভারত যদি আমাদের পাশে না থাকতো তবে আমাদের স্বধীনতা অর্জন করতে অনেক কষ্ট হতো। পাকসেনারা যখন আমাদের দেশে জালাও পোড়াও ও অত্যাচার নির্যাতন করা শুরু করলো, বাংলাদেশের অসহায় মানুষ তখন কোথাও আশ্রায় পায়নী ঠিক এই সময় ভারত সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, সাহস যোগীয়েছে, সাহয্য করেছে এমনকি বাঙ্গালীদের প্রশিক্ষন দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করতে সহযোগীতা করেছে। তার পরে বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নের ভারত সরকারের সহযোগীতায় অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এর পর আবার নতুন করে আরো একটি বন্ধুত্বের সেতু বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। তাই এ সোলার প্যানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের পৌরসভায় আর বিদ্যুত ঘাটতি থাকবেনা এছাড়াও এ সৌর বিদ্যুৎ পৌরসভার বিদ্যুৎ চাহিদা মিটিয়ে জাতীয়গ্রিডেও দেয়া সম্ভব হবে।
পৌর মেয়র আলহাজ্ব মোঃ জুলফিকার আলী বলেন, ২০১১ সালে দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকে পৌরসভার উন্নয়নে সর্বক্ষনিক অকান্ত প্রচেষ্টার ফলে বর্তমানে ষ্মার্ট সিটি হিসেবে সর্বমহলে স্বীকৃতি পেয়েছে। অভাবগ্রস্থ পৌরসভা আজ অনেক উন্নয়ন হয়েছে, ৭০ লক্ষ রাজস্ব আজ ৭ কোটিতে দাড়িয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেনীর পৌরসভা আজ প্রথম শ্রেনীতে উন্নত হয়েছে। এ টাকা দিয়ে দ্বিগরাজ এলাকায় ট্রাক টার্মিনাল,মাল্টিপারপার্স বিল্ডিং, বাউন্ডারী মার্কেট, মেরিন ড্রাইভ রোড, পৌর মার্কেট, অডিটরিয়ম তৈরী করা হয়েছে। পৌরসভায় জলাবদ্ধতা দুর হয়েছে, নদী পাড়াপাড়ের ঘাট নির্মান করা হয়েছে, ঈদগা মাঠ নির্মান, শিশু পার্ক, শহিদ মিনার তৈরী, স্বাধীনতা স্বৃতি স্তম্ভ, শাপলা চত্তর, খেলার মাঠ নির্মানসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলোমান রয়েছে। আমাদের পৌরসভা এলাকায় ১নং ওয়ার্ডের কুমারখালী এলাকায় প্রায় ৮৪ একর জমিতে দুটি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প রয়েছে। এখান থেকে পৌর এলাকায় প্রতিদিন ১৫ লক্ষ লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। এখন এ পুকুরের চার দিকের পাশ খালী পড়ে আছে তাই ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তাতে নতুন করে এ দুই দেশের বন্ধত্বের সেতু বন্ধনে আরেকধাপ এগিয়ে যাবে। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পটি শুরু করার দুই বছরের মধ্যে এটি শেষ হবে। তবে বর্তমানে জুলাই থেকে প্রথম শুরু করে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা দিয়ে এটি ২ থেকে ৫ মেগওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে আর ১শ ২৫ কোটি টাকায় দিয়ে ১৮ মাসের মধ্যে বাকি ১০ মেগওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তার সরবরাহ করা হবে। এই ১৫ মেগাওয়াট ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মংলা পোর্ট পৌরসভা ব্যবহার করার পর উদৃত্য বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। যা থেকে জায়গা ও জালানীসহ অনেক দিক সাশ্রয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান, প্রিমিয়ার সোলার সিষ্টেমস প্রাঃ লিঃ ইন্ডিয়া এর ভাইস- প্রেসিডেন্ট কাশেম হনুমানথ, মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিসেস কামরুন নাহার হাই প্রমূখ।
এই সম্পর্কিত খবর
এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।