ঢাকাWednesday , 19 June 2019
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মমতাময়ী বাবা মায়ের নিরলস চেষ্টার কারণেই: আজ আমি নড়াইলের এসপি

Link Copied!

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■ (১৯,জুন) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)। বলেছেন, মমতাময়ী বাবা মায়ের নিরলস চেষ্টার কারণেই: আজ আমি নড়াইলের এসপি বাবা মায়ের নিরলস চেষ্টায় ফেনির-গ্রামের কর্দমাক্ত মেঠোপথ।
আশেপাশের কয়েক গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ের শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর হাতে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ছেলে নিরক্ষর থাকবে। সামান্য পথও আর শেষ হতে চায় না। বারবার আঁচল দু’চোখ স্পর্শ করছে। একটু পরে মায়ের দু’চোখে শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরে। বাড়ীর অদূরে বই হাতে ফিরে এসেছে ছেলে, স্কুলে যায় নি। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, এভাবেই আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র পেরিয়ে আবারও আষাঢ় আসে। বাবা মা-ছেলের দৈনন্দিন রুটিনের পরিবর্তন নাই। রাতে বিছানায় বাবা মা ছেলেকে বোঝায়। সকালে ছেলে সব ভুলে যায়। মা হাল ছাড়েন না। নাছোড়বান্দা মায়ের নিরলস চেষ্টায় ধীরে ধীরে ছেলে স্কুলমুখী হয়। ছেলেটি পড়াশুনায় কিছুটা মনোযোগী হয়। বাবা মা আবারও হতাশ হন যখন বার্ষিক পরীক্ষায় ছেলেটি। মা ছেলেকে অংক শেখাতে থাকেন। ধীরে ধীরে ছেলে অন্যান্য বিষয়ের মত অংকেও পাকা হয়ে যায়। শিক্ষকেরা বলতে শুরু করেন ছেলেটা অনেক মেধাবী। মায়ের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এক সময় ছেলেটা ক্লাসে ফার্স্ট হতে শুরু করে। ফাইভে বৃত্তি পরীক্ষা দেয়। গ্রামে পঞ্চাশ বছরে কেউ বৃত্তি পায় নাই। ছেলেটা প্রাথমিক বৃত্তি পায়। সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মায়ের চোখ বার বার ভিজে যায়-আনন্দে। স্কুলে বেতন দিতে হয় না, উল্টো ছেলে সরকারী টাকা পায়। টানাটানির সংসারে এর চেয়ে সুখের আর কি থাকতে পারে। জুনিয়র বৃত্তি পাবে জানাই ছিল। পরীক্ষার হলে ইনভিজিলেটর খাতা পড়েই বলে দেয়, ছেলেটা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাবে। সবার অনুমান মায়ের আশা-তাতো আর মিথ্য হতে পারে না। বাবা মা কিছুতেই নয়নের মনি একমাত্র ছেলেকে দূরে যেতে দেবেন না। স্থানীয় কলেজ থেকে পাশ করে ছেলে গ্রামের স্কুলের মাষ্টার হয়ে মায়ের চোখের সামনে থাকবে। ছেলে বেঁকে বসে, ঢাকা কলেজে পড়বে। মা কিছুতেই রাজী না। স্বল্প শিক্ষিত বাবা অবশ্য ছেলের পক্ষ নেন। ছেলে এসএসসি পাশ করে।
এবার কলেজে ভর্তির পালা আসে। বাবা মা বোঝায়। সহজ সরল বাবা মার ভিতরে ভিতরে অনেকটাই নার্ভাস। ঢাকায় অনেক খরচ, কি করে চালাবেন। নিজের জীবনের চেয়েও আদরের ছেলে। ছেলের খুশিই তো মায়ের খুশী। মা রাজী হন। বাবা-মা সংসারের আর্থিক টানাপোড়ন নিয়ে আড়ালে আবডালে আলোচনা করেন। পড়াশুনা করার পরামর্শ ও দেয়। মা-বাবা ছেলেটি ঢাকায় ভর্তি হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে চিঠি লেখেন মা-বাবা। প্রতিমাসেই ছেলে বাড়ি আসে। ঢাকায় ছেলের বেতন লাগে। থাকা-খাওয়ার খরচ আছে।
ঘোড়ার আগে গাড়ি কেনার মতই গোপনে গোপনে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। পরীক্ষার সার্কুলার হয়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতাও ইতোমধ্যে হয়ে গিয়েছে। ফার্স্ট চয়েজ পুলিশ দিতে চায়। চৌদ্দ গোষ্ঠির মধ্যে কেউ পুলিশের চাকরিতে নাই। পুলিশে ঢুকলে গালিগালাজের ট্রেনিং করতে হয়, মানুষ নষ্ট হয়ে যায়। একমাত্র ছেলের এমন ভবিষ্যত মা কিছুতেই মেনে নেবেন না। ছেলের গো সে এএসপি হবে, এবারও সেই সহজ সরল বাবা এগিয়ে আসেন। একটির পর একটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত ফল বের হয়। টাঙানো নোটিস বোর্ডে নিজের রোল নম্বর খুঁজতে থাকে। পুলিশ ক্যাডারেই খোঁজে।
নিচের দিক থেকে খুঁজতে খুঁজতে না পেয়ে হতাশা বাড়তে থাকে। এতো হতেই পারে না, পরীক্ষা অনেক ভালো দিয়েছে। উপরের দিকে প্রথম রোলটা দেখে নার্ভাস হয়ে যায়, ভুল দেখছে না তো! প্রেমিকাকে দেখতে বলে, নিজেও পকেট থেকে এ্যাডমিট কার্ড বের করে। না, সত্যিই রোল নম্বর মিলে যাচ্ছে! ছেলেটা প্রথম হয়েছে! পরের দিন বাড়িতে ফিরে যায়, অনেকক্ষন মায়ের পাশে বসে থাকে। স্বপ্নের চাকুরীতে জয়েন করে। দিন, মাস, বছর গড়ায়। ধাপে ধাপে ছেলেরও পদ বাড়ে। সেই ছেলে পুলিশ বিভাগের উচ্চ পদে। এত গুলো বছর গড়িয়েছে, বদলে গেছে অনেক কিছুই। বাবা, মায়েরও বয়স বেড়েছে, নানান রকম রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে। বদলাননি মা, কাজের চাপে বাসায় ফিরতে দেরি হলে মা ঘুমান না, ফোন করে তাড়া দেন। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় মা বলেন, ‘সাবধানে যা, সাথে লোক আছে তো।’ হরতাল হলে মা বলেন, ‘এই গোলমালের মধ্যে অফিসে যাওয়ার দরকার কি।’
ছেলে হাসে, মাকে বোঝায়, গোলমালে পুলিশের দায়িত্ব বাড়ে। টিভি খুললেই ছেলেকে দেখা যায়, মা ফোন করেন, ‘তোর মুখটা এতো শুকনা কেন?’ খাবার টেবিলে মা বলেন, ‘এতো কম খাইলি?’ মায়ের সামনে পড়লেই মা বলেন, দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছিস, তোর কোন অসুখ-বিসুখ হয় নাই তো? মাঝে মাঝে নাতি-নাতনিদের ছেলের ছোটবেলার গল্প শোনান। কাছে না থাকলে অসুস্থ শরীর নিয়েও প্রতিদিন ফোন করেন, ছেলের শরীরের খবর নেন। এ ব্যাপারে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার),জানান মমতাময়ী বাবা মায়ের নিরলস চেষ্টার কারণেই: আজ আমি নড়াইলের এসপি। পৃথিবীর সবকিছু বদলায়, বদলায় না শুধু সন্তানের প্রতি মায়ের নিঃস্বার্থ ভালবাসা। পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)।

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।