ঢাকাWednesday , 12 June 2019
  • অন্যান্য
  1. আন্তর্জাতিক
  2. করোনা আপডেট
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জেলার খবর
  6. দেশজুড়ে
  7. নির্বাচনের হাওয়া
  8. প্রচ্ছদ
  9. প্রচ্ছদ
  10. ফিচার
  11. বিনোদন
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সকল বিভাগ
  15. স্বাস্থ্যর খবর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে”বিধবা ক্যাম্প”

Link Copied!

শ.ম.গফুর,উখিয়া,কক্সবাজার থেকেঃ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি পাহাড়ের প্রান্তে ডজনখানেক রোহিঙ্গা বিধবা নারীদের আবাসস্থল।২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁরা এখানে এসেছে। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে সপ্তাহব্যাপী পায়ে হেঁটে তাঁরা এখানে এসে পৌঁছায়।

তাঁরা মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আলাদা আলাদা পথে পালিয়ে এসেছেন। আসার পথে তাঁরা বিভিন্ন কষ্ট সহ্য করেছেন। তারা তাদের স্বামী হারিয়েছেন, আবার অনেকে নিজেদের সন্তানও হারিয়েছেন। তাই এই ক্যাম্পের নাম রাখা হয়েছে, ‘বিধবা ক্যাম্প’।

মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর – অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, খুন, নির্যাতন এবং অন্যান্য ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধের হাত থেকে রক্ষা পেতে ৮,লাখেরও বেশি লোক পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। এই জনসংখ্যার মধ্যে ক্যাম্পের নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

তাঁরা একে অপরের সমর্থন এবং সংহতি নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের আয় করার কোন উৎস নেই। তারা ক্যাম্প ছেড়েও কোথাও যেতে পারবেন না। মায়ানমার ফিরে আসার চিন্তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ, সীমান্ত জুড়ে তাদের মাঝে শুধু ভয়ানক স্মৃতি যা ছিল জোর করে তাদের উপর অবিচারের আঘাতমূলক স্মৃতি পুনরজ্জীবিত করা। এখনো, তাদের অস্তিত্ব এখানেও অনিশ্চিত।

প্রায় মাসের এক বিয়োগান্ত নাটকের পরও, তাঁরা এখনও অন্যের দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে তাঁরা সবচেয়ে কম খরচে এখানে জীবন নির্বাহ করছেন। এখন তারা যে ক্ষুদ্র বাড়িতে বসবাস করছে, সেটাও তীব্র বর্ষণ কিংবা দমকা হাওয়াতে লুটিয়ে পড়তে পারে। আবার এই মৌসুমে ঘূর্ণিঝড়ের বার্ষিক হুমকির আহবান ও রয়েছে।

আম্বিয়া খাতুন নামের একজন ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধার নিকট থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে উনি ঠিকমত হাঁটতে পারেন না, কারণ তাকে মায়ানমারের মিলিটারি সদস্য পায়ে আঘাত করেছিল। এরপরে সে যখন নিজের জন্য থাকার স্থান খুঁজে বেড়িয়েছেন, তখন হাঁটতে পারছিলেন না। তার আজীবনের যত টাকা জমানো ছিল, তিনি মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে চেয়ে তা শেষ করেছেন। অচেনা অনেকে তাকে কাঁধে করে পাহাড়ে উঠেছেন এবং নাফ নদী পাড় করিয়ে তাকে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন।

আম্বিয়া জানেন না, তার স্বামীর সাথে কি হয়ছে, তার সন্তানেরা কোথায় আছেন। সে ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে এখন লালন পালন করছেন, যে শিশুটি স্বপ্ন নিয়ে তার দিকে ফিরে চেয়েছিলেন। সে খুব ভীত হয়ে আছেন।
ক্যাম্পের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ নারী ও শিশু। তাদের মাঝে বেশীরভাগ নারী অশিক্ষিত এবং হিংসার শিকার। তারা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার। এখানেও তারা তাদের বাড়িতেই আটকা পরে আছেন। যেখানে রোহিঙ্গা ছেলেরা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, সেখানে রোহিঙ্গা নারীরা ঘড়ের মাঝে আটকে আছেন।

আম্বিয়া কি চায় জিজ্ঞেস করায় তিনি শুধুমাত্র মৌলিক কিছু বিষয় চান বলে জানান। তিনি তার বাড়ি রক্ষা করার জন্য তেরপাল চান, বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটি ছাতা চান, সে একটি স্থান চান যেখানে নিজের পছন্দের খাবার রান্না করে খেতে পারেন।
কারণ তার হাঁটতে খুব কষ্ট হয় এবং তিনি নিজের খাবার আনার জন্য রেশনের খাবারে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন না। গত কয়েকমাস ধরে তার সঙ্গীরা তাকে তাদের ভাগ থেকে খাবার প্রদান করে আসছেন এবং ৮ বছরের সেই শিশু তার আদর যত্ন করেন।

কিন্তু এখনকার মৌসুমের বাতাস তাদের বাড়িঘর নাড়িয়ে তোলে। তাদের দরজা, জানালা যেন ভেঙ্গে আসে। কিন্তু এটি মনে হয় সমস্যার শুরু। বর্ষাকাল আসার পরে এই সমস্ত ক্যাম্প ভেঙ্গে পড়তে পারে। যে মাটির উপর এই ক্যাম্প গড়ে উঠেছে সেই মাটি ভারী বর্ষণে ধুয়ে যাবার আশঙ্কা প্রবল। আর তীব্র বাতাস কি পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে, তা কারও মাথায় আসেনি এখনও।
এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কিভাবে একটি বাসস্থান করে দেয়া যায়, সে চেষ্টা চলছে। তাদের প্রত্যকের মাথার উপরে যেন ছাঁদ থাকে, সেই চেষ্টা চলছে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে কিভাবে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে এখনও কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

ইউএন এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ২ লক্ষ মানুষ এই ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারেন। বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে বোঝা যাচ্ছে, তাঁরা তাদের আবাসস্থল আবার হারাতে পারেন।

এনবিনিউজ একাত্তর ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।